বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভরা মৌসুমেও পানি মিলছে না দুশ্চিন্তায় বোরো চাষিরা

পানিশূন্য জিকে সেচ প্রকল্প

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

ভরা মৌসুমেও পানি মিলছে না দুশ্চিন্তায় বোরো চাষিরা

‘প্রতিবার জানুয়ারি মাসের প্রথমেই সেচের পানি পাই, তবে এবার ফেব্রুয়ারি চলে এলেও পানির দেখা নেই। এ বছর ধান রোপণ করতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করেও লাভ হচ্ছে না। এবার কি ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে?’ বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের পানি না পেয়ে এভাবেই ক্ষোভ জানান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিনাপাড়ার কৃষক তারিক হাসান সাগর। শুধু তারিক নন, এমন ক্ষোভ ঝরছে দেশের বৃহত্তম এ সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার হাজার হাজার কৃষকের মুখে। প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বোরো চাষিদের খেতে জিকে প্রকল্পের সেচের পানি চলে যায়। এবার ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পার হলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পানি। সেচখাল শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। নিজস্ব সেচ ব্যবস্থাপনা না থাকায় ধানের চারা দেওয়া হলেও পানির অভাবে রোপণ করতে পারছেন না কৃষক। জানা যায়, এ প্রকল্পের পানি আসে পদ্মা নদী থেকে। বৃহৎ তিনটি পাম্পের সাহায্যে সেই পানি সেচ খালে দেওয়া হয়। বর্তমানে পদ্মার পানির স্তর অনেকটা নেমে গেছে। এছাড়া পদ্মা থেকে পাম্প হাউসে পানি আসার খালের মুখে চর জেগে উঠায় খালে পানি ঢুকতে পারছে না। ভেড়ামারা উপজেলার হাফিজ উদ্দিন জানান, তার ২০ বিঘা ধানি জমি রয়েছে। বোরো মৌসুমে পানির অভাবে ধান রোপণ করতে পারছেন না। বীজতলাও শুকিয়ে যাচ্ছে। যথাসময়ে পানি না পাওয়ায় চাষিদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সদর উপজেলার ঝালুপাড়ার মহিউদ্দিন বলেন, ‘খালে পানি না আসায় তাকে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যে বীজতলা দেওয়া হয়েছে তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে’। মিরপুর উপজেলার কাঞ্চনকুমার হালদার জানান, বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধানের ওপর নির্ভরশীল তারা। অন্যবার এ সময় ধান রোপণ শেষ হয়ে যায়। এবার পানির অভাবে এখন পর্যন্ত রোপণ শুরুই করতে পারিনি। কুষ্টিয়া কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিনয় কৃষ্ণ বলেন, ‘জেলার বোরো চাষীরা জিকের পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু খেতে এখনও পানি না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা’। দু-এক দিনের মধ্যে পানি পৌঁছে যাবে বলেও জানান তিনি। কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, ‘জিকের পানির উৎস পদ্মা নদী। উৎসমুখ ও তার আশপাশ জুড়ে চর জেগেছে। তা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করতে একটু সময় বেশি লেগেছে। এ কারণেই পানি সরবরাহে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে’।

সর্বশেষ খবর