বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাতানো দরপত্রে হাতানো হচ্ছে কোটি কোটি টাকার কাজ

লক্ষ্মীপুরে টেন্ডার সিন্ডিকেটের সন্ত্রাস

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা পাতানো দরপত্র দাখিল করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার কাজ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত অধিদফতরের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৫ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে তারা। ওই টেন্ডারে পাহারা বসিয়ে কাজ পাইয়ে দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে। এভাবে চলতে থাকায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। কাজ হচ্ছে নিম্নমানের। এদিকে, ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নেতা-কর্মীর মধ্যে বেড়েছে অসন্তোষ। গত বছর ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নতীকরণের ভিতপাথর স্থাপন করেন। হাসপাতাল উন্নয়নে গণপূর্ত বিভাগ ৩৫ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। জানা গেছে, কাজ বাগানোর লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতা জেলা শহরের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেন। বৈঠকে নোয়াখালী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের  কয়েক নেতা অংশ নেন। ওই বৈঠকে ২ পার্সেন্ট করে দেওয়ার শর্তে নোয়াখালীর এক পছন্দের ঠিকাদারকে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট জানা যায়, ওই কাজের জন্য দরপত্র বিক্রি হয়েছে ২০টি। এর মধ্যে নোয়াখালীতে ২টি ও লক্ষ্মীপুরে ১টি জমা পড়েছে। নিয়ম রক্ষার জন্য মেসার্স এম এম বিল্ডার্স, রূপালী জি এম সন্স কনসোর্টিয়াম, ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে কৌশলে ৩টি পাতানো দরপত্র দাখিল করা হয়। লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘কার্যালয়ের ভিতরে কোনো কিছু ঘটেনি। বাইরে কী হয়েছে না হয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, পাঁচ-ছয় জন শীর্ষ নেতা সিন্ডিকেট করে একের পর এক টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। দলের নাম বিক্রি করে ভাগ-বাটোয়ারায় নিজেদের পকেট ভরছেন তারা। এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তারা। জেলা যুবলীগ সভাপতি এ কে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপু ও ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাসের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল কিছুই জানেন না বলে জানান। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি অবহিত নন। টেন্ডারসন্ত্রাসের সঙ্গে তিনি ও আওয়ামী লীগ জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। গণপূর্তের এই টেন্ডারের মতো সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে। টেন্ডার নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর