শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাঁধের টাকা হাওরে উড়ে

এবারও ফসল রক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষক

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

বাঁধের টাকা হাওরে উড়ে

সরকারি টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বালুর বাঁধ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সুনামগঞ্জে গত বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় হাওরে প্রায় শতভাগ ফসলহানির পর এবারও বাঁধ নির্মাণে নীতিমালা লঙ্ঘন, প্রকল্প গ্রহণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অর্থ আত্মসাতের কারণে ফসল সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হাওরবাসী। বরাদ্দ বেশি থাকায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিনব কৌশল যোগ হয়েছে এবার। বৃষ্টিপাত শুরুর আগে সবগুলো হাওরের বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন না হলে এবারো গত বছরের পরিণতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণের জন্য ১৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। পাউবো ও প্রশাসনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে ৯৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)। ইতোমধ্যে ইউএনওদের ব্যাংক হিসাবে ১২২ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এবার হাওরের বাঁধ নির্মাণের নীতিমালা পরিবর্তন ও মোটা অঙ্কের বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্ট অনেকের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে উদ্বেগ রয়েছে কৃষকের মাঝে। জেলার নির্মাণাধীন বেশিরভাগ বাঁধ পরিদর্শন করে যে চিত্র ওঠে এসেছে, তাতে বন্যা হলে কৃষকের ফসল প্রকৃত অর্থে সুরক্ষা দেওয়া যাবে কি-না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাউবোর দেওয়া কার্যাদেশ অনুযায়ী গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের সব বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোনোটির কাজই এখনো সম্পন্ন হয়নি। দেরিতে তৈরি করা এ সব বাঁধের মাটি বৃষ্টি শুরুর আগে বসার (কমপেকশন) পর্যাপ্ত সময় থাকবে না বলে বাঁধগুলো দুর্বল হবে। পাউবো এ পর্যন্ত বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। কাজ শুরু না করেও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি তাদের হিসাব থেকে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা তুলে নিয়েছে। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী বাঁধের ৫০ মিটার দূর থেকে মাটি এনে বাঁধ নির্মাণের বিধান থাকলেও এর তোয়াক্কা না করে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি তোলা হচ্ছে অনেক স্থানে।

পাউবো জানায়, হাওরের বাঁধে নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি ছয় ইঞ্চি অন্তর দুর্মুজ (কম্পেকশন) করার কথা, কিন্তু দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো বাঁধে দুর্মুজ করতে দেখা যায়নি। এ খাতে মোট বরাদ্দের ২০ ভাগ অর্থ দেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত কী করা হবে এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে, বৃষ্টিতে যাতে মাটি ধসে না যায় সেজন্য বাঁধে ঘাস লাগানোর কথা থাকলেও কোথাও লাগানো হচ্ছে না। অনেক বাঁধ মাটির বদলে বালু দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। বালুর বাঁধ পানির চাপ সামলাতে পারবে না বলে জানান চাষিরা। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘যে সব স্থানে অনিয়ম হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ সুনামগঞ্জর জেলা প্রশাসক ও জেলা কাবিটা মনিটরিং কমিটির সভাপতি সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি দেরিতে নামায় অনেক হাওরে বাঁধ নির্মাণের কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে ঠিকই তারপরও শতভাগ কাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি জানান, কোনো প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদও দিয়েছি।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে গেল বোরো মৌসুমে অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙে হাওরের প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জামির বোরো নষ্ট হয়ে যায়। এতে হাওরপাড়ে শুরু হয় হাহাকার। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির প্রতিবাদ হয়। টনক নড়ে উপর মহলের। দুদক ৬১ কর্মকর্তা-ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা করে। ঠিকাদারী প্রথা বাতিল করে বাঁধ নির্মাণে সরাসরি কৃষকদের যুক্ত করার বিধান রাখা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর