রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বজনপ্রীতির কমিটিতে ত্যাগীরা হতাশ

সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

তিন ভাই, হাইব্রিড আর প্রবাসীদের ঠাঁই হলেও মূলধারার অনেক নেতার জায়গা হয়নি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে। দুঃসময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জীবন বাজি রাখা নেতাদের বদলে কমিটিতে বাম, বাসদ থেকে আওয়ামী লীগে আসা নেতাদের জয়জয়কার। অতীতে রাজপথে শ্রম-ঘাম ঝরানো নেতাদের প্রত্যাশা ছিল তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হবে। কিন্তু কমিটির নমুনা দেখে তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার রাতে দীর্ঘ ২০ বছর পর প্রকাশ করা হয় সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হয়নি। এ জন্য ভুক্তভোগীরা দায়ী করছেন কমিটি গঠনে দায়িত্বে থাকা জেলা সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনকে। ৭৫ সদস্যের কমিটিতে দলটির অন্তঃপ্রাণ নেতারা জায়গা না পেলেও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইমনের তিন ভাইয়ের অন্তর্ভুক্তি বিস্মিত করেছে নেতা-কর্মীদের। কমিটিতে জায়গা পাওয়া অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে খায়রুল কবির রুমেন করায়ত্ত করেন সহসভাপতি পদ এবং সদস্যপদ পান স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা ফজলুল হক তুহিন। মতিউর রহমান রাজনীতিতে অপরিচিত তার প্রবাসী ছেলে মশিউর রহমান জুয়েলকে বসিয়েছেন সদস্য পদে। যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর ছোট ভাই শামীম চৌধুরীকে করা হয়েছে তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক। একইভাবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা অ্যাড. আপতাব উদ্দিন সহসভাপতি ও তার মেয়ে নিগার সুলতানা কেয়া পেয়েছেন মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের পদ। ছাত্রজীবন থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় বেশির ভাগ সাবেক নেতা পদবঞ্চিত হয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগের অনেক সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকের ভাগ্যে পদ-পদবি জোটেনি। বঞ্চিত হয়েছেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি-জিএসরা। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিয়োগান্তুক ঘটনার পর চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জেলা ছাত্রলীগের হাল ধরেছিলেন মতিউর রহমান পীর। বিগত কমিটির সদস্য ও দুঃসময়ে দুবারের জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্বে থাকা এই নেতার স্থান হয়নি ৭৫ সদস্যের কমিটিতে। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিতেন্দ্র তালুকদার পিন্টু, আক্তারুজ্জামান সেলিমসহ কেউই স্থান পাননি। সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের হয়ে ভিপি, জিএস পদে নেতৃত্ব দিয়ে ঝড় তোলা নেতা মানিক লাল দে, আজহারুল ইসলাম শিপার, মনিষ কান্ত দে মিন্টু—কেউ নেই কমিটিতে। পদবঞ্চিত হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক দীপঙ্কর সেন রিবু, নবনী কান্ত দাস, পলিন বখত, সভাপতি নজরুল ইসলাম মাসুক, শাহ আবু তারেক। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ অন্তঃপ্রাণ বলতে যে কয়টি পরিবারকে বোঝায় তার একটি সদ্য প্রয়াত পৌরমেয়র আয়ুব বখত জগলুলের পরিবার। রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যুর দেড় মাস পর ঘোষিত কমিটিতে প্রয়াত জগলুলকে রাখলেও জায়গা হয়নি তার পরিবারের কোনো সদস্যের। গুনে গুনে তার অনুসারীদেরও বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দেশের মাটিতে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করা নেতারা বঞ্চিত হলেও বিদেশে পাকাপাকি করছেন, এমন লোকের ‘কপাল খুলেছে’। এ ব্যাপারে জানতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনের সঙ্গে মোবাইলে ফোন করলে কেউ রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর