রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
শ্রীবর্দী হাসপাতাল

প্রেসক্রিপশন দেন স্বাস্থ্য সহকারী নার্স ব্রাদার

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

৫০ শয্যাবিশিষ্ট (নির্মাণাধীন) শ্রীবর্দী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমস্যার অন্ত নেই। হাসপাতলের কর্মকর্তা  কর্মচারিরা মাঝে মধ্যে আসেন। তিন বছর ধরে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা প্রেষণে ঢাকায় থাকার পর কদিন আগে বদলি হয়েছেন। রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেন স্বাস্থ্য সহকারী, নার্স, ব্রাদার, পিয়ন থেকে ঝাড়ুদার পর্যন্ত। সার্টিফিকেট বাণিজ্য, ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট, অফিস না করে বেতন উত্তোলন। সব মিলিয়ে হাসপাতালটিই এখন অসুস্থ বলে অভিযোগ উপজেলাবাসীর। গত ২৪ এপ্রিল উপজেলার বিশিষ্টজনেরা হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করে মানুষের  চিকিৎসার আগে হাসপাতালের চিকিৎসা দাবি করেছেন।

জানা গেছে, সরকারি বিধি মতে, ৫০ শয্যার এই হাপসাতালের ডাক্তার দরকার  ২৪ জন। আছেন পাঁচজন। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দুজন প্রেষণে আর দুজন উচ্চতর ট্রেনিংয়ে। ডা. আনিছুর রহমান নামে একজন চিকিৎসক আছেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী সোলাইমান, সামছু মিয়া, রহিম উদ্দিন, খালেদা আক্তার বলেছেন— তিনদিন ঘুরেও তারা ডাক্তার পাননি। অধিকাংশ সময়ই চিকিৎসা দেন স্বাস্থ্য সহকারী, নার্স, ব্রাদার্স আর সুযোগ পেলে আয়া ঝাড়ুদাররাও ব্যবস্থাপত্র দেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল সরকার হাসপাতালে অতি আধুনিক একটি আল্ট্রাসাউন্ড মিশিন দেয়। মিশিনটি চালানোর জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে তিন মাসের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। পাঁচ মাস চালানোর পর রহস্যজনক কারণে মিশিনটি  চালু অবস্থায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিন বছর আগে ইসিজি মিশিন আসলেও এর পরিণতিও ওই আল্ট্রাসাউন্ড মিশিনটির মতই। এক্সরে মিশিনটি মাঝে মাঝে চলে। রিএজেন্টের অভাবে প্যাথলজি বিভাগ চার মাস ধরে বন্ধ।  রোগীদের খাবারের মান নিয়ে সাধারণের প্রশ্ন অনেক পুরনো। খাবারের বিলের সঙ্গে ভর্তি রোগী সংখ্যার  মিল নাই। রোগীর বিছানা ও মশারি পরিষ্কারের নামে প্রতি বছর সরকারি টাকার লুটপাট চলছে। মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্য এখানে চরমে। এখানে স্থানীয় সংগঠন লোকাল বয়েজ-এর সংগঠক এ জেড রুমান বলেছেন অসুস্থ হাসপাতালের চিকিৎসা দরকার। জেলা পরিষদ সদস্য আল আমিন জানিয়েছেন  কে চালায় হাসপাতাল মানুষ জানে না। এই জনপ্রতিনিধি অর্থ কেলেংকারি অভিযোগের তদন্ত চেয়েছেন। শ্রীবর্দী পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ জানিয়েছেন, হাসপাতালের জলাতংক রোগ হয়েছে, সবাই ভয় পায়। দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও নানা সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ইমরান হোসেন জানিয়েছেন তিনি নিয়মিত অফিস করেন। তিনি এখন থেকে কোনো অনিয়ম বরদাশত করবেন না বলে জানিয়েছেন। ডা. ইমরানের অভিযোগ হাসপাতালের প্রধান সহকারী মোজাহেদুল ইসলাম বেলাল হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বেলাল বলেছেন ডাঃ ইমরান অনেক দিন পরপর কর্মস্থলে আসেন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. রেজাউল করিম জানিয়েছেন হাসপাতালের সমস্যার বিষয়ে  অবগতি হয়েছি। ওইখানে কি হয়েছে তার ব্যবস্থা দ্রুত করা হবে।

সর্বশেষ খবর