শনিবার, ৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডাক্তারের বিকল্প ম্যাটস

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

পেটের পীড়া নিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু তানিসাকে নিয়ে আসেন সাজনা বেগম। কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞের কক্ষে যান। সেখানে তাদের মতো অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। ভিতরে দুজন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তানিসাকে দেখে ব্যবস্থাপত্রে সাত প্রকারের ওষুধ লিখে দেন একজন। কিছুক্ষণ পর আসেন বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক। ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ বেশি দেখে অভিভাকদের সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জানান। তিনি আগেরগুলো বাদ দিয়ে চারটি ওষুধ লিখে দেন। পরে জানা যায়, আগের ব্যবস্থাপত্র লিখেছিলেন মৌলভীবাজারের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষানবিশ শিক্ষার্থী। তিনি যে ওষুধ লিখেছিলেন তা এই শিশুর জন্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিতে এভাবেই চলছে বহির্বিভাগের চিকিৎসা। রোগীদের অভিযোগ, সময়মতো সব ডাক্তার হাসপাতালে আসেন না। তাই বাধ্য হয়ে ম্যাটস শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। রোগীরা জানান, টিকিট কাটার পর কাউন্টার থেকে যে কক্ষে যেতে বলা হয় তারা সেখানে যান। কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর কে শিক্ষানবিশ সাধারণ রোগীদের এ সব জানার সুযোগ নেই। ডাক্তারের কক্ষে যিনি বসেন তাকেই ডাক্তার মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পার্থ সারথি বলেন, ‘ম্যাটস শিক্ষানবিশ শিক্ষার্থীরা এখানে শিখতে আসেন। তারা ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন না। বিষয়টি দেখছি।’ হাসপাতালের সেবার মান আগের চেয়ে বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, নতুন করে সিটিস্কেন পরীক্ষা ও ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে। লোকবলের অভাবে সিসিইউ আইসিইউ চালু করা যাচ্ছে না।’

বহির্বিভাগের মতো আন্ত:বিভাগের একই অবস্থা। রাতে কোনো চিকিৎসক থাকেন না। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরাই সেবা দেন। অভিযোগ আছে হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবহেলা ও একজনের রিপোর্ট অন্যজনকে দেওয়ার। পাওয়া যায় না বিনামূল্যের ওষুধ। পুরোনো ভবনটিতে পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক। সেপটিক ট্যাংক উপচে জরুরি, সার্জারি ও শিশু বিভাগের শৌচাগার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবহার করতে হচ্ছে পাশের বিভাগের শৌচাগার।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে এখানে চিকিৎসকসহ লোকবল সংকট রয়েছে। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার ৫৩ পদের বিপরীতে আছেন ৩৫ জন। সেবিকাসহ দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার ১১৪টি পদ থাকলে কর্মরত আছেন ৮০ জন। সংকট রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির লোকবলেও। কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আবাসিক ভবন সমপ্রসারণ হয়নি। বর্জ্য ফেলার জায়গা অপ্রতুল। যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু আছে তা ভারী চিকিৎসা যন্ত্রপাতি চালানোসহ সার্বিক কার্যক্রমের উপযোগী নয়। নতুন ভবনে র‌্যাম্প (ট্রলি দিয়ে রোগী ওঠানামা করানোর সমতল সিঁড়ি) নেই। লিফট বন্ধ হলে রোগী নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর