শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘পাচারকারীর’ খপ্পরে নিস্ব একাধিক পরিবার

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মানব পাচারকারীর প্রতারণার শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব মাদারীপুরের কালকিনির কয়েকটি পরিবার। অনেকে এনজিও থেকে তোলা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে যাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে সেখানে দালালরা তাদের দিতে পারেনি কোনো কাজ। উল্টো আরও টাকার জন্য আটকে রেখে নির্যাতন করছে। জানা যায়, কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার পান্তাপাড়ার মালেক হাওলাদারের দুই ছেলে হেমায়েত ও এনায়েত দীর্ঘদিন ধরে সৌদি প্রবাসী। সেই সুবাদে ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তারা জনপ্রতি ৭-৮ লাখ টাকার বিনিময়ে অনেককে সৌদি আরব নেন। তাদের কাউকে কাজ না দিয়ে আত্মসাৎ করেন পুরো টাকা। ভুক্তভোগীরা সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশে ফিরতে চাইলেও আসতে দেওয়া হচ্ছে না। অতিরিক্ত টাকা দাবি করে প্রায়ই মারধর করা হয়। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের। একাধিক পরিবারের অভিযোগ, পান্তপাড়া গ্রামের মঞ্জুর ছেলে ইমন, মেয়ে জামাই রিপন, ইস্রাফিল, পূর্ব বোতলা গ্রামের মোকলেছ, সাহেবরামপুরের রবিউলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে সৌদি আরব বসবাস করছেন হেমায়েত ও এনায়েত। তাদের বিরুদ্ধে ডাসার থানায় মানব পাচার ও হয়রানিমূলক একাধিক মামলা রয়েছে। ভুক্তভোগী রবিউল ইসলামের মা জানান, ‘রবিউলকে জিম্মি করে বাংলাদেশে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আরও দেড় লাখ টাকা। হেমায়েতের শ্বশুর ও তার স্ত্রী রিয়ার হাতে তিনি ধারদেনা করে এ টাকা তুলে দেন। আর সৌদি আরব যাওয়ার সময় এনায়েতের স্ত্রী নিপাকে দিয়েছেন ছয় লাখ।’

জানা যায়, বরিশালের মুলাদি থানার আলাউদ্দিনকে একইভাবে সৌদি আরব নেয় হেমায়েত। বিনিময়ে তার স্ত্রী ও শ্বশুর পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়। ফ্রি ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে একটি নামসর্বস্ব, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ভিসা দেওয়া হয়। যে ভিসায় তিনি কোনো কাজ করতে পারেননি। দেশে ফিরে আসতে চাইলে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে অসুস্থ অবস্থায় পাসপোর্ট নিয়ে কৌশলে পালিয়ে পুলিশের সহায়তায় বাংলাদেশে ফিরে আসেন আলাউদ্দিন। দুঃসহ সে স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফিরে তাকে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুমন দেব বলেন, ‘যারা মানবপাচারের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত তাদের ব্যাপারে পুশিল সচেতন রয়েছে। ডাসার থানায় এদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ছাড় পাবে না।’ অভিযুক্ত হেমায়েত ও এনায়েতের পান্তপাড়ার বাড়িতে গেলে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর