শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবারও অচল বাংলাবান্ধা

বন্ধ আমদানি রপ্তানি

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

আবারও অচল হয়ে পড়েছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব আর শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ হয়ে গেছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ১৯৯৭ সালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় চালু হয়। শুরুতে নেপালের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চললেও পরে ভারত ও ভুটানের সঙ্গেও বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয়। বর্তমান এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। প্রতিদিন এই স্থলবন্দর দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। কিন্তু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এই স্থলবন্দরে হঠাৎ করেই লেবার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এটিআই লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারাদার নিয়োগ করার পর থেকেই বন্দর ক্রমে অস্থির হয়ে ওঠে। গত কয়েক মাস থেকেই এই অস্থিরতা চলছে। প্রশাসনের নানা উদ্যোগও কোনো কাজে আসেনি। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য বন্দরসংশ্লিষ্ট সবাই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে ব্যবসায়ীদের কাছে বন্দর চার্জ  বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এই কারণে ভুটান থেকে আমদানিকৃত পাথর ও পাথরের ট্রাক বন্দরে আটকে দেওয়া হয়। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের সহকারী ম্যানেজার তারেকুজ্জামান তারেক জানান, বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন থেকে বন্দরের বকেয়া চার্জ পরিশোধ করছেন না ব্যবসায়ীরা। এই বিরোধের কারণে আটকে পড়া গাড়ির চালকরা অমানবিক কষ্টে দিন পার করছেন। এক কাপড়ে কখনো খেয়ে না খেয়ে বন্দরের মধ্যে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এমনকি কারও পরিবারের সদস্য মারা গেছেন আবার কারও বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও তাদের বন্দরের পণ্য খালাসের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আটকে পড়ার ১৩ দিন পর গত বুধবার বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভুটানের গাড়িচালকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ম্যানেজার তারেকুজ্জামান তারেক আনসার বাহিনীর এক সদস্যের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে ভুটানি গাড়িচালকদের গুলি করার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি মোবাইলে ভাইরাল হয়ে যায়। বাংলাদেশি নিযুক্ত ভুটানের দূতাবাস পর্যন্ত গড়ায়। ক্ষোভের মাথায় শতাধিক ভুটানি চালক বন্দরের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস করে। গত বৃহস্পতিবার সরকারি চাপে ভুটানের চালকদের কারপাস দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন লোড আনলোডিংয়ের জন্য কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ১০৪ টাকা (ভ্যাট বাদে) পরিশোধ করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ লোড আনলোড দুটোরই বিল নিলেও কর্তৃপক্ষের চুক্তিবদ্ধ ইজারাদার ব্যবসায়ীদের পণ্য লোড করে দিচ্ছেন না। এতে নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে ব্যবসায়ীদের প্রতি ১ হাজার টন পাথরে অতিরিক্ত ৯০ হাজার টাকা গুনতে হয়। আমদানিকারক তফিজুল ইসলাম জানান, আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী সব ফি পরিশোধ করলেও নির্দিষ্ট সেবা পাচ্ছি না।  ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের আনলোড বাবদ টন প্রতি শ্রমিকদের ১৯ টাকা করে দর নির্ধারণ করলে শ্রমিক অন্তোষ চরমে ওঠে। এতে করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় আদালতে শ্রমিকদের আসামি করে মামলাও করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের দাবি বিনা শর্তে মামলা তুলে নিতে হবে।

এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জরুরি সভা ডাকলেও কোনো সমাধান আসেনি। পরে জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক প্রিয়সিন্ধু তালুকদারকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। বর্তমানে বন্দর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মোকাবিলায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বন্দর এলাকায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর