বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভেষজ উদ্ভিদে জীবনজীবিকা

মাহবুবুর রহমান, শ্রীপুর

ভেষজ উদ্ভিদে জীবনজীবিকা

রোদে শুকানো হচ্ছে ভেষজ উদ্ভিদ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ডালেশ্বর গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবার ভেষজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। তারা ভেষজ লতাপাতা, গুল্ম প্রক্রিয়াজাত করে দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিতে সরবরাহ করেন। ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে জীবিকার তাগিদে ভেষজ সংগ্রহে ঝোঁকেন এ গ্রামের মানুষ। গ্রামটি শ্রীপুর উপজেলার ভাওয়াল বনাঞ্চলের ভেতর। ডালেশ্বর গ্রামের আব্দুল কাদির মিয়া (৭০) বলেন, ৬০ বছর আগে তার বাবা ওয়াহেদ আলী মিয়া এ এলাকায় প্রথম ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তখন ভাওয়ালের বন ছিল গভীর। নানা প্রজাতির প্রাণি থাকত বনে। লতাপাতা, গাছ-পালার অভাব ছিল না। বাবার সঙ্গে ভেষজ সংগ্রহের কাজে গিয়ে নিজেও জড়িয়ে পড়েন এ পেশায়। প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান বলেন, ৪০ বছর আগে তার বাবাও এ পেশায় যুক্ত হন। বাবার সঙ্গে নিজেও ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন। দিনে দিনে ভেষজ সংগ্রহের কাজটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। তিনি বলেন, গাজীপুরের ভাওয়াল ছাড়াও ময়মনসিংহ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়। যারা বন থেকে এগুলো সংগ্রহ করেন তাদের অগ্রিম আনুমানিক টাকা দেওয়া হয়। পরে ভেষজ সংগ্রহ করে খলায় জমা করেন। ওজন ও পরিমাপ করে কম হলে টাকা ফেরত পাই এবং বেশি হলে আরও টাকা দিই। একই গ্রামের আব্দুস শহীদ বলেন, যে উদ্ভিদ বেশি পাওয়া যায় তার দাম তুলনামূলক কম। যেটি দূর দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় তার দাম একটু বেশি। যেমন নিমপাতা, বেলপাতা, শিশু পাতা ইত্যাদি ৫০০ টাকা মণ। আমলকি, বহেরা প্রতি মণ দুই-আড়াই হাজার। আর হরীতকী, নিসিন্দা, কালো মেঘ, অর্জুন ছাল ৪-৫ হাজার টাকা মণ দরে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করে থাকেন। ডালেশ্বর গ্রামের ভেষজ খলামালিক মনির হোসেন বলেন, উন্মুক্ত খলায় লতাপাতা শুকাতে গেলে নানা সমস্যা হয়। মানুষ, গরু-ছাগল খলায় ঢুকে ভেষজ উপাদান নষ্ট করে ফেলে। সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে খলা উন্নয়ন করে ভেষজ উদ্ভিদ প্রক্রিয়াকরণ আরও সহজ হতো। স্থানীয় বরমী ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বহু আগ থেকে ডালেশ্বর গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার ভেষজ উদ্ভিদ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এটি এখন ওই গ্রামের অনেকের পেশা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর