মেঘনায় মাটিবোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ২০ শ্রমিকের ১৭ জনের বাড়িই পাবনার তিনটি গ্রামে। মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টায় চাঁদপুরের মতলব ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার সীমান্তবর্তী কালিয়াপুর এলাকার মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি। উদ্ধার হয়নি ডুবে যাওয়া ট্রলারটিও। নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের আহাজারিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের পাশাপাশি ওই তিন গ্রামে। চলছে মাতম।
নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
তারা হলেন- পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মু ুমালা গ্রামের গোলাই প্রামাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন (১), আবদুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নূর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন (২), লয়ান ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম; দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন; মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চীপুর গ্রামের আমির খান ও আবদুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী এবং পাশের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রহমত আলী।পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন ট্রলারডুবিতে পাবনার ভাঙ্গুড়ার শ্রমিক নিখোঁজের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বুধবার সকাল থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধানে মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে অভিযান চলছে।
তিনি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদের বরাত দিয়ে আরও বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার স্থান চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কাজ করছেন সেখানে।
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চীপুর গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে মামুন আলী প্রামাণিক ও পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফ আলী মোল্লার ছেলে শাহ আলম জানান, ‘ট্রলারের মাথার দিকে ছিলেন মামুন আর পেছনের দিকে শাহ আলমসহ বাকিরা। ট্রলার ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে আমরা ১৪ জন উঠে আসতে পারলেও অন্যরা পারেনি।’
মামুন ও শাহ আলম আরও জানান, ‘ওই সময় চারদিকে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তিন ঘণ্টার বেশি আমরা ঠান্ডা পানির মধ্যে সাঁতরে ভেসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল মৃত্যু খুবই কাছে। পরিবারের কথা মনে পড়ছিল। আর ১০ মিনিট পানিতে থাকলে হয়তো মারা যেতাম। মাটির ট্রলার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে না পৌঁছায় মালিকপক্ষ মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পায়। সন্দেহ হলে তখন তারা আরেকটি ট্রলার নিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে।’
এদিকে, নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পরও স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে পরিবারগুলোয় চলছে মাতম। তাদের আহাজারিতে খানমরিচ ইউনিয়নের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান জানান, ‘আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষই হতদরিদ্র। নিখোঁজ শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে মুন্সীগঞ্জ গিয়েছিলেন। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো উপার্জনের অবলম্বন স্বজনদের হারিয়ে যেন অকূলপাথারে পড়েছে তাদের পরিবার। একদিকে স্বজন হারানোর শোক অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’