ভাঙ্গার কুমারপাড়ার ‘জালের কাঠি’ শ্রমিকদের চলছে দুর্দিন। অনেকটা অলস সময় পার করছেন তারা। আগে বর্ষা মৌসুমসহ বছরের কয়েক মাস কুমার পরিবারগুলো ব্যস্ত থাকত জালের কাঠি তৈরিতে। এখন এর চাহিদা তেমন নেই। সে জায়গা দখল করেছে চায়না জাল। কুমারপাড়ার বাসিন্দারা জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জালের কাঠি তৈরি ও বিক্রির পরিবেশ সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। নইলে হারিয়ে যাবে কুমারপাড়ার মানুষের জীবিকার পথ। ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা, ঘারুয়া ও সিঙ্গারিয়া গ্রামে শতাধিক কুমার পরিবারের বাস। এরা পেশায় মৃৎশিল্পী। মাটির বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে। এর মধ্যে জালের কাঠি অন্যতম। কুমার ও আড়িয়াল খাঁ নদবেষ্টিত ভাঙ্গায় রয়েছে বেশ কিছু খাল-বিল। ফলে এ এলাকায় জালের কাঠির চাহিদা ছিল ব্যাপক। এখন নিষিদ্ধ চায়না জালে সয়লাব নদ-খাল-বিল। কমে গেছে জালের কাঠির চাহিদাও।
সিঙ্গারিয়া গ্রামের পালপাড়া ঘুরে দেখা যায়, ১৮-২০টি পরিবারের বেশির ভাগই অসচ্ছল। একসময় প্রতিটি পরিবার জালের কাঠি তৈরি করত। তাদের বাড়ি থেকে জাল ব্যবসায়ীরা কাঠি কিনে নিতেন। এখন কেউ আসেন না। গ্রামে জাল তৈরির লোকও খুঁজে পাওয়া যায় না। সিঙ্গারিয়া গ্রামের গৃহবধূ জ্যোৎস্না পাল (৪০) বলেন, ‘আগে প্রতি বছর ৩-৪ লাখ জালের কাঠি তৈরি করতাম। বাড়ি থেকে ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে নিতেন। এখন জালের কাঠির তেমন চাহিদা নেই। তার পরও পিতৃপুরুষের পেশা ছাড়তে পারছি না। এখনো জালের কাঠি তৈরি করে বসে থাকি কেউ কিনতে আসবেন। মাঝে মাঝে দু-এক জন এলেও দাম পাই না। আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
আরেক গৃহবধূ পুষ্প পাল (৪৮) বলেন, ‘আমাদের যে বয়স তাতে অন্য পেশায় যেতেও পারছি না। জালের কাঠি ছাড়া আমরা মাটির হাঁড়ি, পাতিল, দইয়ের পাত্র তৈরি করি। বর্তমানে দইয়ের পাত্র ছাড়া অন্যগুলোর চাহিদা নেই বললেই চলে। সে জায়গা দখল করেছে সিলভারের হাঁড়ি, পাতিল, প্লাস্টিক সামগ্রী। এ পেশায় আমাদের প্রজন্মই হয়তো শেষ প্রজন্ম হবে।’ ঘারুয়া গ্রামের কলেজছাত্রী স্মৃতি পাল বলেন, ‘গ্রামের প্রবীণরা এখনো জালের কাঠি তৈরি করেন। চাহিদামতো দাম না পাওয়ায় তারা হতাশ।’ ভাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবলা চক্রবর্তী জানান, নদ-খাল-বিলে নৌকা ব্যবহার করে যেসব লম্বা জাল পেতে মাছ ধরা হয়, সে জালে কাঠি ব্যবহার হয় বেশি।