নোয়াখালীতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা টানা ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ ছাড়া উজানে ভারী বৃষ্টিপাতে সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সিলেটে চতুর্থ দফায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিদের পাঠানো খবর-
নোয়াখালী : বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টা টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার মাইজদীসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয়রা জানান, অতি ভারী বৃষ্টিতে পানিতে ডুবে গেছে মাইজদী শহরের ডিসি অফিস, এসপি অফিস, জজ কোর্ট, জেলখানা, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় সড়কসহ অধিকাংশ সড়ক। এ ছাড়া মাইজদীর প্রধান সড়কের টাউন হলের মোড়, বড় মসজিদের মোড়ে পানি উঠেছে। জেলার বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিলসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টি ও পাশাপাশি ফেনী ছোট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকে পানি ধেয়ে আসে। এতে অনেক বাড়ির আঙিনা ডুবে আছে হাঁটুপানিতে, অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। সড়কের আশপাশের বাসাবাড়ির আঙিনায় এখনো বৃষ্টির পানি জমে আছে। এ ছাড়া জেলার সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। এ দিকে জেলা শহর মাইজদীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় হালকা বৃষ্টি হলেই শহরে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, নোয়াখালী মহিলা কলেজের পাশে ড্রেন বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে আশশাপের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরও এক সপ্তাহ নোয়াখালীতে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সিলেট : সিলেটের উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি। কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর বাঁধের পুরনো ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। ফলে সিলেটে চতুর্থ দফায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের ২৭ মে সিলেটে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নামতে না নামতে ১৭ জুন সিলেটজুড়ে দেখা দেয় দ্বিতীয় দফা বন্যা। আর সিলেটবাসী তৃতীয় দফা বন্যার শিকার হন জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ১১ লাখ মানুষ। কয়েকদিন ধরে সিলেটের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া সুরমা, সারি, ধলাই, লোভা, সারিগোয়াইনসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জকিগঞ্জের ছবড়িয়া এলাকা দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে জনপদে। পূর্বের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সিলেটের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি চলছে। সেখানে ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইতোমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টের পানি। সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কি না তা নিয়ে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’