রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে জেলেপাড়া। হ্রদে মাছ শিকারের সুবিধার্থে জেলেরা এ পাড়া গড়ে তুলেছেন। এখানে বসবাস প্রায় ৩০০ পরিবারের। যাদের বছরে ৯ মাস সংসার চলে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরে। টানা চার মাস বন্ধ রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার। অলস সময় কাটছে মৎস্যজীবীদের। কর্মহীন পরিবারগুলোর নেই অন্য কোনো আয় রোজগার। মানবেতর দিন কাটছে তাদের।
‘একটা সময় হ্রদে নৌকা ভাসিয়ে শুরু হতো জেলেদের দিন। জাল টেনে মাছ শিকারে কাটত ব্যস্ত সময়। সন্ধ্যায় নৌকা ভরে মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরত তারা। মাছ বিক্রি করে ভালোভাসে সংসার চলত তাদের। এখন চিত্র পুরো ভিন্ন। অভাব যেন তাদের পিছু ছাড়ে না।’ কথাগুলো বলছিলেন মৎস্যজীবী জগদ্বীশ দাস। তিনি ৫৩ বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার করে চালাচ্ছেন জীবন ও জীবিকা। একই অভিযোগ কমলা দাস ও বিফলা দাসের। তারাও জানান, কর্ম নেই। তাই টাকাও নেউ। নুন আনতে পান্তা ফুরাচ্ছে। কখনো খেয়ে, আবার কখনো না খেয়ে কাটছে দিন।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তর (বিএফডিসি) সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন এবং বিএফডিসি যৌথ উদ্যোগে বন্ধ করা হয় মাছ শিকার। তিন মাস পর মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। হ্রদে পানি কম থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ে আরও এক মাস। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় জেলে ও শ্রমিকসহ মাছের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর মধ্যে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। মৎস্যজীবীদের খাদ্য সংকট দূর করতে সরকারিভাবে তালিকাভুক্তদের প্রতি মাসে দেওয়া হয় ২০ কেজি চাল। তাতে তাদের সংসার চলে না। অভিযোগ আছে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রায় অর্ধলাখ জেলে পরিবার।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি জেলা ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল আলম ভূঁইয়া জানান, সাধারণত তিন মাসের মাথায় খুলে দেওয়া হয় কাপ্তাই হ্রদ। এবার হ্রদে পানি কম থাকায় মাছ শিকার করা সম্ভব নয়। কম পানিতে মাছ ধরলে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বন্ধ সময় বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়েছে। ১ সেপ্টম্বর হ্রদে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছ শিকার শুরু হবে।