কেউ দিচ্ছিলেন এক দফার স্লোগান, আবার কেউবা যাচ্ছিলেন বাজারে, কেউবা কাজের সন্ধানে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে অসহায় এমন অনেক ছাত্র, শ্রমিক ও দিনমজুরকে। এমন ঘটনা ঘটেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। সদ্য শেষ হওয়া এই আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জের নয়জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়জন ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এবং তিনজন মুন্সীগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল, সংশ্লিষ্ট থানা ও নিহতের স্বজনরা। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের ৪ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলনে ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে এদের মৃত্যু হয়। ঢাকা ও টঙ্গীতে মারা যাওয়া ছয়জন হলেন- সিরাজদিখানের মধ্যপাড়ার তাজুল ইসলামের ছেলে ছাত্র মোস্তফা জামান সমুদ্র (১৭), গজারিয়ার বালুয়াকান্দি বড় রায়পাড়ার সানাউল্লাহর ছেলে ছাত্র মেহেদী হাসান (২০), মুন্সীগঞ্জ সদরের সুখবাসপুরের সুলতান শেখের ছেলে ফরিদ শেখ (২৯), মিরকাদিম পৌরসভার আনিছুর রহমান চৌধুরীর ছেলে পৌর ছাত্রদল সদস্য সচিব শারিক চৌধুরী মানিক (২৯), শ্রীনগরের আইয়ুব খলিফার ছেলে আল-আমিন খলিফা (১৮) ও নজরুল ইসলামের ছেলে ছাত্র শোভন।
৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে আন্দোলনকারী-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এদিন বেলা ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রণক্ষেত্র ছিল জেলা শহর। এ সময়ে হাসপাতালের হিসাবে গুলিবিদ্ধসহ আহত হন শতাধিক। নিহত হন তিনজন আন্দোলনকারী। তারা হলেন- শহরের উত্তর ইসলামপুরের আলী আকবরের ছেলে শ্রমিক সজল, ইসলামপরের অস্থায়ী বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ সরদার ওরফে ডিপজল (১৭) মতিন ফরাজীর ছেলে দিনমজুর রিয়াজুল ফরাজী (৩৫)। নিহত কয়েকজনের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, শোকে স্তব্ধ স্বজনরা। ইসলামপুর এলাকায় নিহত রিয়াজুল ও সজলের স্বজনরা জানান, পাখির মতো ঝাকেঝাকে গুলি করা হয়। কেউ তো কোনো অন্যায় করেনি। শ্রীনগরের নিহত শুভর বাবা নজরুল ইসলাম জানান, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সবাই। শুভর মায়ের সঙ্গে কথা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, সৃষ্টি কর্তার কাছে ছেলের জন্য দোয়া করতে।