টানা বর্ষণে বরিশাল নগরের সড়কসহ নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে রয়েছে। নগর ও আশপাশের এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মজীবী, রিকশাচালকসহ নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টে রয়েছে। এদিকে বরগুনার আমতলীতে অবিরাম বৃষ্টির পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। এতে মহা বিপাকে পড়েছেন তারা।
বরিশাল নগরের রিকশাচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, ‘প্রত্যেকদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় মানুষ কম বের হয়। আয়-ইনকাম তো হয় না। বৃষ্টিতে ভিজজা রিকশা চালাইয়া যা আয় হয়, হেইয়া দিয়া খাওন হয় না। এ রহম চললে তো না খাইয়া থাকতে অইবো।’ সদর উপজেলার চরবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. পারভেজ বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদীর পানি বেশি। তার মধ্যে টানা বৃষ্টিতে বাড়ির আশপাশে পানিতে ডুইব্যা রইছে।’
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক পণব কুমার রায় জানান, ১ আগস্ট থেকে বরিশালে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩ আগস্ট সবচেয়ে কম ০ দশমিক ০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। টানা এ বর্ষণ আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, মৌসুমে বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। লঘুচাপ কেটে যাওয়ায় সমুদ্রবন্দরে জন্য কোনো সতর্ক সংকেত নেই। তবে নদীবন্দরের জন্য ১ নম্বর সর্তক সংকেত রয়েছে।
পর্যবেক্ষক বলেন, বুধবার দুপুর তিনটা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৭০ দশমিক ০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
বরগুনার আমতলীতে পানির নিচে আমনের বীজতলা, চাষাবাদ বন্ধ : পূর্ণিমার জোর প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভারিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি ও অবিরাম বৃষ্টির পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। জানা গেছে, আমতলীতে এ বছর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। জমিতে বীজ রোপণ করতে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করেছেন। কিন্তু আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। কৃষকদের চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। এতে মহাবিপাকে পড়েছেন তারা। কৃষকরা জানান, অধিকাংশ বীজতলা পানির নিচে রয়েছে। জলকপাটগুলো বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, পানিতে মাঠ ভরে গেছে। চাষাবাদ করতে পারছি না। এ বছর কী হবে জানি না? চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের কৃষক নাশির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, শুধু পানি আর পানি। দ্রুত এ পানি নিস্কাশন না হলে জমি চাষাবাদ করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, দুই একর জমির বীজতলা করেছিলাম। তা এখন পানির নিচে। দুই-এক দিনের মধ্যে পানি না সরলে বীজতলা পচে যাবে। একই গ্রামের জগদিশ চন্দ্র শীল বলেন, পানিতে সমূদয় বীজতলা পচে গেছে। জমিতে কী রোপণ করব তা ভেবে পাচ্ছি না। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার ঈশা বলেন, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে মাঠ ঘাট তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকদের জমি চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অনেক বীজ পচে গেছে। এতে কৃষকদের বেশ ক্ষতি হবে। আমতলী ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত জল কপাট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।