অবৈধ চাঁদার ভাগ বসাতে বগুড়ায় কৌশলে দখলে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নামে বেনামে কিছু প্রতিষ্ঠান দখল করে চাঁদাবাজির রাস্তা পরিষ্কার করে রাখছে। সময় পেলেই চাঁদাবাজির উৎসবে নেমে পড়বে তারা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বগুড়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। এদিকে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন অন্যায়ভাবে দখল, ভাঙচুর, নির্যাতনের শিকার না হয় সে বিষয়ে জেলা বিএনপি ও জেলা জামায়াত থেকে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার কথা বলা হয়েছে।
জানা যায়, বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শানবীর আহমেদ শয়ন। এর আগে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বগুড়া শহর যুবলীগের নেতা ও বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বগুড়া শহর বিএনপির এক নেতা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেন। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরই বিএনপি থেকে প্রতিষ্ঠান দখল না করার বিষয়ে ঘোষণা করলে সেখানে কৌশল করা হয়। কৌশলে এই পদে বসেন শানবীর আহমেদ শয়ন। তিনিও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শয়ন বগুড়া শহর বিএনপির সহমুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক। অথচ তার পরিবারের অধিকংশ সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বগুড়া শহরজুড়ে গুঞ্জন উঠেছে শানবীর আহমেদ শয়ন এর প্রয়াত বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে পিস্তল হাতে মাঠে নামতেন। সেই থেকে তার পিতার নাম হয়ে যায় পিস্তল দুলাল। বগুড়ায় এই নামেই তাকে সকলে চেনেন। শানবীর আহমেদ শয়নের আপন চাচা জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক (অব্যাহতি প্রাপ্ত) সামছুদ্দিন শেখ হেলাল। দীর্ঘসময় তিনি জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে সংগঠনের নির্বাচনে পরাজিত হলে সামছুদ্দিন শেখ হেলালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের কথা উঠে আসে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের হলে তার বসতবাড়ির মালামাল ক্রোক করা হয় এবং তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার জেল হাজতে যান। একই পরিবারের একজন আওয়ামী লীগ একজন বিএনপি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ঘুরে ফিরে তারা দখলে রাখেন। অবৈধ আয় হলে তা তারা ভাগবাঁটোয়ারা করে নেন। এই চিত্র বগুড়া জেলার সর্বত্রই। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কখনোই চলতে পারেনি। ডায়াবেটিক হাসপাতালটির প্রতিটি ওয়াশরুম এখনো অপরিচ্ছন্ন। রোগী দেখানোর ডাক্তার ফি, পরীক্ষা, বেডভাড়া এখনো অন্যান্য বেসরকারি ক্লিনিকের চেয়ে বেশি। এই হাসপাতালের সব রোগীই বয়স্ক। অথচ তাদের বসা, রেস্ট, ওপরে ওঠার এখনো সুব্যবস্থা করা হয়নি। আয় বেশি হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানটির এখন তিনটি ইউনিট। একটি নবাববাড়ী রোডে, দ্বিতীয়টি মাটিডালি ও তৃতীয়টি দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়াতে অবস্থিত। এই ডায়াবেটিক হাসপাতালের কমিটি নিয়ে চলছে নানা কৌশল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামীপন্থি নেতারা সরে গেলেও এই প্রতিষ্ঠানের আহ্বায়ক এখন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন মুকুল আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৫ সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য রয়েছেন বিএনপি নেতা ডা. মামুনুর রশিদ মিঠু, আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ভাই আলী এখতিয়ার তালুকদার তাজু, বগুড়া পৌরসভার জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর মো. এরশাদুল বারী এরশাদ ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান। এই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর থেকে শহরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সমিতির নামে রয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকার নগদ অর্থসহ ও প্রায় ১০ কোটি টাকার এফডিআর।
বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শানবীর আহমেদ শয়ন জানান, তিনি বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যেহেতু সাধারণ সম্পাদক অনুপস্থিত তাই তাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই সব চাঁদা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়ক থেকে কোনো চাঁদা উঠবে না। তিনি বলেন, তার চাচা সামছুদ্দিন শেখ হেলাল একসময় শ্রমিক লীগ করতেন। দীর্ঘদিন তিনি রাজনীতিতে নেই। তিনি কোনো দলই করতেন না বলে জানান। শয়ন বলেন, বগুড়ায় কোনো প্রতিষ্ঠান কারও দখলে নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব পরিবর্তন হচ্ছে মাত্র।