মাচায় ঝুলছে সারি সারি নাইসগ্রিন জাতের লাউ। মাচার নিচে একই সঙ্গে চাষ হচ্ছে মুলা, পুঁইশাকসহ হরেক রকম সবজি। এসব সবজি সাধারণত শীতকালীন হলেও কৃষিতে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ায় এখন আবাদ হচ্ছে সারা বছর। ফলে সময়ের ফসল অসময়ে পেয়ে একদিকে যেমন বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। অপরদিকে সারা বছর পুরণ হচ্ছে মানুষের জন্য নিরাপদ সবজিরও চাহিদা। যাকে বলে মিশ্র পদ্ধতিতে সবজি চাষ। একসঙ্গে এ পদ্ধতিতে লাউ, মুলা, পুইশাক ও বেগুনসহ হরেক রকম সবজি চাষাবাদ করে খুব সহজেই সফলতার মুখ দেখতে পারেন একজন কৃষক। অভাবনীয় সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা মির্জাপুর দিয়ার গ্রামের কৃষক মোঃ ইলিয়াস শেখ। তিনি সফল কৃষি উদ্যোগক্তাও। তাঁর রয়েছে নার্সারী, পলিনেট হাউজ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশকবিহীন সবজির চারা উৎপাদন, বিপনন ব্যবস্থা। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার চারা বিক্রি করে থাকেন। পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া ৩ বিঘা এবং লিজ সুত্রে ৩ বিঘাসহ ৬ বিঘা জমিতে কৃষি কাজ করে মাসে লাখ টাকা আয় করেন এ কৃষক। পড়ালেখা করে চাকুরীর আশা না করে কৃষিকেই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের যাবতীয় খরচ যোগান মিটিয়ে বাড়তি হয় হয় এ কুষি খাত থেকে। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস জানান, মিশ্র পদ্ধতিতে ফসল চাষাবাদ করলে জমির সর্বৎকৃষ্ট ব্যবহার হয়। এতে একই জমিতে এক সময়ের মধ্যে তিনটি ফসল ফলানো যায়। এ পদ্ধতিতে নলডাঙ্গা উপজেলায় অন্তত ১২০০ থেকে ১৩০০ জন কৃষক সবজি চাষাবাদ করছেন। বিশেষ করে বিপ্রবেলঘড়িয়া, ঠাকুরলক্ষ্মিকোল ও ব্রক্ষ্মপুর এলাকার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি পরিমান মিশ্র পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদ করছেন। কৃষক মোঃ ইলিয়াস শেখ জানান, কৃষি বিভাগের কাছ প্রযুক্তিগত ও কারিগরি সহায়তা বা পরামর্শ নিয়ে ১২ কাঠা জমিতে গত প্রায় ৯০ দিন আগে তিনি মিশ্র পদ্ধতিতে এক সঙ্গে নাইসগ্রীন জাতের লাউয়ের চারা রোপনসহ মুলা ও পুইশাকের বীজ বপন করেন। এরপর ওই জমির ক্ষেতে মাচা তৈরী, পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষায় এবং কীটনাশকবিহীন ফসল উৎপাদনে জৈব বালাইনাশক ফাঁদসহ ১৪ থেকে ১৫টি আঠালো ফাঁদ, ৬টি ফেরোমিন ফাঁদ তৈরী করে চাষাবাদকৃত এসব ফসলের নিবির পরিচর্যা করে তা বিক্রি উপযোগি করে তোলেন। জমি প্রস্তুত, বীর, সার, মাচা, ফাঁদ তৈরী ও পরিচর্যাসহ তার এ পর্যন্ত চাষাবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করেছেন তিনি। এরমধ্যে ১২০০ পিচ লাউ ৩৬ হাজার টাকা, মুলা ৬ হাজার টাকা এবং পুঁইশাক ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, এক বিঘা জমি থেকে এক সঙ্গে যেন তিন বিঘার ফসল উৎপাদন করা যায়, সেজন্য মিশ্র পদ্ধতিতে জমিতে ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ, প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
কেননা এতে করে একটি জমিতে ফসলের তীব্রতা বাড়ে ৩০০ ভাগ। সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা কাজ করছেন। তবে বর্তমানে তার উপজেলায় ফসলের তীব্রতা ১৮৭ ভাগ। কারন হালতিবিলে বছরে মাত্র একটি ফসল হয়। সেখানে ভাসমান সবজি চাষ করা গেলে ৩০০ ভাগ লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। তিনি মিশ্র পদ্ধতিতে নাইসগ্রীন জাতের লাউ চাষ প্রসঙ্গে বলেন, এ জাতের লাউয়ের ফলন ও আকার ভাল হয়। খেতেও অন্যান্য লাউয়ের তুলনায় একটু বেশি সুস্বাদু। সারা বছর এ জাতের লাউ চাষ করা যায়। তবে এই জাতটিও হাইব্রিড। চলতি মৌসুমে নলডাঙ্গা উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে নাইসগ্রীন জাতসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ হয়েছে। যার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ২৮ থেকে ৩০ মেট্রিক টন।