রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সহস্রাধিক কৃষক। প্রায় ১০ বছর ধরে জলাবদ্ধতার কারণে তাদের জমিতে ফসল হচ্ছে না। এক সময় এখানে জমির পানি সাওমারা খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতো। সেখানে বছরে তিনবার ফসল ফলাতেন কৃষকরা। সেই খালটি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ বছর সামান্য বৃষ্টিতে দুই দফায় রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ইউনিয়নের গোপিনাথপুর, কালিকাদহ, রামকৃষ্ণপুর, চর-নারায়ণপুর, বেলিনগর মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তলিয়ে যায় ফসল।
গতকাল মিজানপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর এলাকায় দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কচুসহ বিভিন্ন সবজি পানির নিচে। সাওমারা খালে বিভিন্ন কালভার্ট বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে কৃষকের মুখে চিন্তার ভাঁজ। জলাবদ্ধতা নিরসন ও কৃষি আবাদ নির্বিঘ্ন করার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাননি কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, মিজানপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর, কালিকাদহ, রামকৃষ্ণপুর, চর-নারায়ণপুর, বেলিনগর মাঠে একসময় ভালো ফসল হতো। বৃষ্টির পানি সাওমারা খাল দিয়ে নিষ্কাশন হতো। পানি প্রবাহের ব্যবস্থা না রেখেই মিজানপুর ইউপি থিম কাকলাদাইড় বেড়িবাঁধ ভায়া, গোপীনাথপুর সড়ক নির্মাণ করে এলজিইডি। এর পর গোপীনাথপুর বাজারের খালের জমি দখল হতে শুরু করে। এরপর অস্তিত্ব সংকটে সাওমারা খাল। ভোগান্তিতে পড়েন মিজানপুর ইউনিয়নের সহস্রাধিক কৃষক।
স্থানীয় কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে কৃষকদের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে রাস্তা নির্মাণ করেছে এলজিইডি। রাস্তার পাশে গোপীনাথপুর বাজারের খাল দখল করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এরপর খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা অনেক বার অফিসারদের বলেছি। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি।
আরেক কৃষক ফজলু সরদার বলেন, আমার ১২ বিঘা ধান, ৪০ শতাংশ কচু, ২৫ শতাংশ বেগুন পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার মতো শত শত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমি কয়েক বছর ধরে ফসল ফলাতে পারছি না। আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।
মালেক মোল্লা নামে এক দখলদার বলেন, খালের জায়গা সামান্য দখল করে দোকান নির্মাণ করেছি। কোনো দিন কেউ বাধা দেয়নি। তবে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে কৃষকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সরকার পদক্ষেপ নিলে সেখান থেকে সরে যাবেন বলে জানান তিনি। আস্তে আস্তে সমস্ত খালই দখল হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী সদর উপজেরা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন করার বিষয়টি আমাদের দপ্তরের নয়। গোপীনাথপুরে কয়েক শ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।
কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (ক্ষুদ্রসেচ) রাজবাড়ী জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, খাল সংস্কার ও দখলের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আপাতত হাতে কোনো প্রকল্প নেই। প্রকল্প এলে ওই অঞ্চলের খাল দখলমুক্ত করে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।