বাংলাদেশ ভারত সীমান্তঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ছতরপুরের সৌন্দর্যমন্ডিত লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে এ বিল। যেখানে পানিতে ঘুরে বেরিয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। এখানে আরও আকর্ষণ বাড়াচ্ছে সাদা শাপলা, সাদা বক, শঙ্খচিল ও দেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এ যেন এক স্বর্গপুরী। যার চারদিক শোভা পাচ্ছে শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা চিত্রকর্ম।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষার ছয় মাস নিচু জমিতে কখনো হাঁটু, কখনো কোমর পানি থাকে। এতেই প্রকৃতির এই দান লাল শাপলা ফোটে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিলে শাপলা বেশি থাকে। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত প্রায় দুই মাস শাপলা বিলে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হয়। তবে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে মেলে ধরে লাল শাপলাগুলো আবার সূর্য মাথার ওপর উঠতেই ধীরে ধীরে নিজেকে আবার গুটিয়ে নেয়। আর তাই তো শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে সূর্য প্রখর হওয়ার আগে। প্রকৃতির নিয়মকানুন যারা জানেন বা বোঝার চেষ্টা করেন, তারাই শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে ভোরেই হাজির হয়ে যান বিজয়নগর ছতরপুরের এ লাল শাপলা বিলে। ছোট ছোট নৌকায় করে বিলজুড়ে ঘুরে বেড়ানোতেই এখানে আনন্দ। কৃষ্ণা প্রমি নামের এক পর্যটকের মতে, এ শাপলার বিলে ঘুরে যে কেউ চিরচেনা বাংলার এক অপরূপের দেখা পাবে। তবে এ রূপ দেখতে হলে অবশ্যই ভোরের সূর্য ওঠার আগে সেখানে থাকতে হবে। ঘুরতে আসা আরেকজন বলেন, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দেবে। বিলের পানিতে নৌকা নিয়ে এগিয়ে চললে দেখা মিলবে শাপলার সঙ্গে বক, ডাহুক, পানকৌড়ি, দোয়েল, শালিক, মাছরাঙাসহ দেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। শোনা যাবে তাদের কলকাকলি। এ ছাড়া দেখা মিলবে মৌমাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ও। এ যেন এক স্বর্গপুরী, যার চারদিক শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহ নেওয়াজ শাহ বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে সড়কপথে এ শাপলার বিলের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। জেলা শহরের শিমরাইলকান্দি শেখ হাসিনা সড়ক থেকে অথবা কাউতলী থেকে সিএনজিযোগে সহজেই আসা যায়। এ জন্য জেলা শহর ও আশপাশের জেলা থেকে আসা বেশির ভাগ পর্যটক ভোরেই নিজেদের মোটরসাইকেল, গাড়ি নয়তো ভাড়া করা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও দেখে ঘুরতে আসা তরুণী নুসরাত জাহান ইভা বলেন, বিলের পানিতে নৌকায় ভেসে বেড়াতে খুবই ভালো লেগেছে। বারবার এখানে ঘুরতে আসারও ইচ্ছা রয়েছে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হলে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে আসতে চাইবেন না। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে এ শাপলা বিল সংরক্ষণ ও যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়ে নজর দেয়। বিজয়নগর ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, লাল শাপলা বিল পর্যবেক্ষণে উপযোগী করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।