দীর্ঘদিনে আলোর মুখ দেখেনি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ বহু কাক্সিক্ষত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। শুধু প্রতিশ্রুতিতেই কেটে গেছে ১৩ বছর। বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দুই দফায় রেলপথ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়। আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই রেললাইন হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার সড়ক পথে দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার। দুর্ভোগ লাঘব হবে জনসাধারণের।
জানা যায়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এই দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে হয় নানা ভোগান্তি। বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। শুধু বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিন জেলার পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় ৩-৪ ঘণ্টা। প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ৮-৯ ঘণ্টা। সড়ক পথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে ঢাকা যেতে লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুতে সরাসরি ট্রেনে পৌঁছানো যাবে মাত্র এক ঘণ্টায়। বগুড়া থেকে সরাসরি যমুনা সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে যাত্রীদের ১১২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। কমবে খরচ, আর্থিকভাবে সাশ্রয় হবে ট্রেন যাত্রীরা। দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের বাসিন্দারা রেলপথ নির্মাণের দাবি তোলেন। এই পথ নির্মাণ হলে দূর হবে ভোগান্তিও। কৃষিপণ্য পরিবহনে খরচ কমবে। এসব প্রকল্প প্রস্তাবনা করার পরও অজ্ঞাত কারণে ফাইনবন্দি হয়ে আছে বছরের পর বছর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প মতে নতুন রেলপথে জংশন ও সাতটি স্টেশন করা হবে। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ প্রস্তাবিত ৮৪ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এবং ২০১৫ সালে বগুড়ায় দলীয় জনসভায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মাহবুবর রহমান মন্টু বলেন, ‘আমাদের পাশের জেলাগুলোর অনেক উন্নত হয়েছে। নতুন রাস্তাঘাট, অবকাঠামো হয়েছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। আমরা চাই বগুড়া আরও এগিয়ে যাক। রেলপথ নির্মাণ করে উন্নয়নের ধারায় সংযোগ করা হোক বগুড়াকে। বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া বগুড়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকার সহযোগিতা প্রয়োজন। এ জেলায় যে পরিমাণ উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা কেন হয়নি খতিয়ে দেখা হবে।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথের ভূমি হুকুম দখল করতে যৌথ তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে জমি হুকুম দখল করা হবে।