৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৭:৫৬

ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তুমিয়ার পাশে জেলা প্রশাসন

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তুমিয়ার পাশে জেলা প্রশাসন

মাহবুব উল আলমের ‘গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধ’ নামক বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে একটি সদনও তাকে দেয়া হয়েছে। তারপরও পরিচয়পত্র মেলেনি পঞ্চগড়ের সূর্যসন্তান মুক্তিযোদ্ধা মক্তুমিঞার। পরিচয় পত্র মেলেনি বলেই কোন সুযোগ সুবিধা পান না তিনি। ভিক্ষা করেই জীবন অতিবাহিত করছেন।

তিনি জানান ‘কত মানুষইতো ছবি নিয়া গেল। কিন্তু কিছুই পাইলাম না। শুনছিলাম মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আমার জন্য সাহায্য দিবার চাইছে। কিন্তু হেও কথা রাহে নাই।’

মক্তুমিঞার অসহায়ত্বের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন নগদ ৫ হাজার টাকা, কম্বল, চাদর লুঙ্গি সহ প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র প্রদান করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, সহকারি কমিশনার শাহীন রেজা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মির্জা আবুল কালাম দুলাল মুক্তুমিঞার বাড়িতে গিয়ে তার হাতে তুলে দেন। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিমাসে ভাতা প্রদানেরও আশ্বাস দেয়া হয়।  
 
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও আজও মিলেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। অনেকে বড় বড় আশ্বাস দিলেও কথা রাখেননি কেউ। তাই প্রতিদিন তাকে বের হতে হয় ভিক্ষার থলি নিয়ে। এক মুঠো ভাতের জন্য ৮০ বছর বয়সেও মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতেন এই মুুক্তিযোদ্ধা।
 
২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর পঞ্চগড় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবার সম্মুখে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক ওই ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনে তার জন্য দুটি রিক্সা ও ১ টি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এক বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তুমিয়া কোন সহযোগিতা পাননি। তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে ভিক্ষার থলিকেই আপন করে নিয়েছেন তিনি। বয়সের ভারে নূজ্য মুক্তু আগের মতো দূর দূরান্তে ভিক্ষার থলি নিয়ে বেড়াতে পারেন না। একটু হাঁটতেই হাঁপিয়ে উঠেন। দৃষ্টি শক্তিও কমে গেছে।

পঞ্চগড় শহর থেকে ১০ মাইল উত্তরে সীমান্তবর্তী মহারাজার দিঘি পাড়ের বাসিন্দা মুক্তুমিয়া। একটি মাত্র ছোট ভাঙা কুঁড়ে ঘর।
 
প্রতিবেশিরা জানায়, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার ছেলে মেয়ে মোট সাত জন। প্রথম স্ত্রীর ১ ছেলে ২ মেয়ে ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ২ ছেলে ২ মেয়ে। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। সবাই ঢাকায় থাকেন। প্রতিবেশিরা বলেন, তার ছেলেমেয়েরা তাকে দেখাশুনা করা দূরে থাক কেউ কেউ তাকে বাবা বলেই স্বীকার করতে চান না। দেশের এই সূর্যসন্তানকে তাই সহায় সম্বল হারিয়ে ভিক্ষার থলি হাতে নিতে হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ৩/এ মধুপাড়া কোম্পানির কোম্পানি কমান্ডার এ কে এম মাহবুব উল আলম বলেন, মুক্তুমিয়া পঞ্চগড়ের ভিতরগড় এলাকায় বেশ কয়েকবার রেকি করে আসেন এবং নির্ভুলভাবে শত্রুর অবস্থানসমূহ চিহ্নিত করে স্কেচ ম্যাপ তৈরি করে দেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর্জা আবুল কালাম দুলাল বলেন, মুক্তুমিয়ার এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয়পত্র হয়নি। তাই কোন সহযোগিতা করা যাচ্ছে না।
মুক্তুমিয়া জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধ করেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আজও স্বীকৃতি পাইনি। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিমিয়ার এখন শেষ স্বপ্ন তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবরে শায়িত করা হয়।

বিডি-প্রতিদিন/ ০৫ ফেব্রুয়ারি ১৬/ সালাহ উদ্দীন

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর