১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৯:৩৪

বগুড়ার বউমেলা

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার বউমেলা

ক্রেতা নারী, বেশিরভাগ বিক্রেতাও নারী। সংকোচ, সংকট নেই। স্বাধীনভাবে কেনাকাটা করার রয়েছে অফুরন্ত সম্ভার। পুরুষদের সে বিষয়ে রয়েছে সহযোগিতা। একে অপরের এমন সহযোগিতা দিয়েই শেষ হলো বগুড়ার 'বউমেলা'। বউমেলায় বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার নারীর ঢল নামে। তারা নিজেদের প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পন্য কেনাকাটা করেন। ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার দ্বিতীয় দিন এলাকার নারীদের জন্য মেলা বসে এবং এ মেলাকে স্থানীয়ভাবে 'বউমেলা' বলা হয়। এ মেলায় নারীরাই ক্রেতা এবং বিক্রেতা থাকেন। বউমেলার দিনে পুরুষদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ থাকে। 

জানা যায, প্রায় ৪শ’ বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহ নামক স্থানে সন্নাসীর মেলা শুরু হয়। তখন থেকে বিচিত্র ধরনের মাছ, মিষ্টির সমাহার ঘটে। এ ছাড়া মেলায় কাঠের ফার্নিচার বেচাকেনা হয়। ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার অথবা মাঘ মাসের শেষ বুধবার মেলা বসে। মেলাটি একদিনের হলেও তা তিনদিন পর্যন্ত চলে। বুধবার মূল মেলার পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একই ইউনিয়নের ত্রিমোহনী নামক স্থানে বউ মেলার আয়োজন করা হয়। এলাকায় রেওয়াজ বা রীতি প্রচলিত রয়েছে যে, সারা বছর এলাকার মেয়ে জামাইকে দাওয়াত না দিলেও এ মেলার সময় অবশ্যই মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করতে হবে। তাই মেলা উপলক্ষ্যে আসা মেয়ে বা এলাকার মেয়েরা প্রথমদিনের মেলায় পুরুষদের ভিড়ের কারণে স্বাধীনভাবে কেনাকাটা করতে পারে না। মেলায় গ্রামীণ বধূদের পদচারণার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে নিয়ম ছাড়ায় জমে উঠে বউমেলা। 

বউমেলার দিন সকাল থেকে দলে দলে শিশু আর নারীরা মেলায় ভিড় করে। তারা নিজেদের পছন্দের কসমেটিকস, চুড়ি, ফিতা, দুল, নাকের নোলক কিনে নেয়। মেলার বেশিরভাগ বিক্রেতারাও নারী। তাই ক্রেতা-বিক্রেতারা স্বাছন্দে মেলায় কেনাকাটা করেন। 

মেলায় আসা ক্রেতা বুলি আক্তার জানান, প্রথমদিন পোড়াদহ মেলায় বড় বড় মাছ, মিষ্টি কাঠের ফার্নিচার, বিভিন্ন প্রকার দেশীয় ফল, কসমেটিকস, খেলনা প্রচুর বিক্রি হয়ে থাকে। এ দিনে প্রচুর মানুষের সমাগম থাকায় ঠিকমত কেনাকাটা করা যায় না। তাছাড়া পণ্যের দামও থাকে প্রচুর। কিন্তু বউমেলার দিনে দরদাম করে কেনাকাটা করা যায়। পুরুষরা সহজে মেলার মধ্যে প্রবেশ করে না। নারীরাই এ মেলাতে ইচ্ছেমত কেনাকাটা করতে পারে। বউমেলার দিন আয়োজক কমিটি থেকে বিধি নিষেধ করা হয়। 

মেলার দোকানী হাজেরা বেগম জানান, প্রথম দিনে নারীরা বেশি মেলায় আসতে পারে না। একদিকে মেলায় থাকে প্রচুর ভিড় আবার অপরদিকে রান্না, বাড়ির স্বজনদের খাওয়ানো ইত্যাদি সামলাতেই দিন চলে যায়। তাই পোড়াদহ মেলার পরের দিন এলাকার গৃহবধূরা মেলায় কেনাকাটা করতে আসে। সকাল থেকেই প্রচুর কেনাবেচা হচ্ছে। এ মেলাকে বউমেলার নামকরণ করা হয়। শুধু নারীরাই কেনাকাটা করে থাকে।

দোকানী রহিমা আক্তার জানান, গত দশ বছর ধরে বউমেলায় দোকান দিয়ে আসছেন। রংপুর-দিনাজপুর-নাটোর-রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়িরা এ মেলায় তাদের পসরা সাজিয়েছে। বউমেলায় বিভন্ন বয়সীরা কেনাকাটা করে থাকেন। 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর