২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ২০:৩২
ট্রলারডুবিতে নিহত ৬ শ্রমিকের দাফন সম্পন্ন

সিরাজগঞ্জের তিন গ্রামে শোকের মাতম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জের তিন গ্রামে শোকের মাতম

নারায়ণগঞ্জে মাটিবাহী ট্রলারডুবিতে নিহত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ছয় শ্রমিকের পরিবার ও তিনটি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। বৃহস্পতিবার ভোরে ছয়জনের লাশ গ্রামে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তিনটি গ্রামের মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে।

স্বজনদের হারিয়ে বার মুর্ছা যাচ্ছে কারো স্ত্রী, কারো মা, কারো সন্তান ও কারো বাবা। ছোট ছোট শিশুরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল প্রিয় বাবার মুখের দিকে। স্বজনের বুকফাটা আর্তনাতে পুরো এলাকা শোকে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। নিহতের স্বজনদের শান্তনা দিতে গিয়ে সকলেই নিজেই চোখের জল ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে উল্লাপাড়া উপজেলার তেলীপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে তেলিপাড়া কবরস্থানে চারজনকে এবং একই সময় বানিয়াকৈড় ও ফাজিলনগর কবরস্থানে বাকী দু'জনকে দাফন করা হয়। বুধবার নারায়ণগঞ্জ আলীরটেক ইউনিয়নের গোগনগর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে ট্রলার ডুবিতে ঘুমন্ত অবস্থায় উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের গারেশ্বর গ্রামের মন্তাজ আলীর দুই ছেলে নেজাব আলী (৩৮) ও সুজাব আলী (৩২), শহিদুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম (১৮), আজিজল হকের ছেলে শাহীন (২৮), বানিয়াকৈড় গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে সুজন (৩০) এবং ফাজিলনগর গ্রামের চয়েনদির ছেলে আবু তালেবের (৩০) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পরিবারের মুখে আহার তুলে দিতে এলাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে গিয়ে মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করছিলেন তারা।

সরেজমিন জানা যায়, নিহতের ছয়জনই হতদরিদ্র ও ভূমিহীন। প্রত্যেকেই পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু একটি ঝড় তাদের চিরনিন্দ্রায় ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে ছয়টি পরিবারকে। গারেশ্বর গ্রামের মন্তাজ আলী দুই সন্তান নেজাব ও সুজাবকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। শুধু বুকফাটা আর্তনাথ করছেন আর বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। নেজাবের স্ত্রী কদভানু একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে পাগল প্রায়। ছোট তিন ছেলে কবির (৭), করিম (৯), নবীর (৫) বার বার বাবার মুখের কাছে গিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। সুজাবের স্ত্রী আনজিরা খাতুন স্বামী হারিয়ে পাগলের মতো বিলাপ করছেন আর মুর্ছা যাচ্ছেন।

বাবা-মা, স্ত্রী রাশিদা খাতুন ও ৫ বছরের মেয়ে মিম ও ৩ বছরের ছেলে রাব্বীকে নিয়ে ছিল শাহিনের একটি ছোট্ট সংসার। তার মৃত্যুতে শাহিনের পরিবারে নেমে এসেছে কালো অন্ধকার। পাগল প্রায় স্ত্রী রাশিদা বিলাপ করে বলছেন, মৃত্যুর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে ফোনে করা হয়েছিল। এ সময় শাহিন ছেলে-মেয়ের জন্য কি কি কিনতে হবে তা জেনে নিয়েছিল। কিন্তু আদরের সন্তানদের জন্য কিছুই আনা হলো। লাশ হয়ে ফিরলো শাহিন।

একই গ্রামের শহিদের ছেলে শরীফুল ইসলাম ছিল পরিবারের একমাত্র সন্তান। মা সালেখা খাতুন ছেলের মৃত্যুতে বুকফাটা আর্তনাত করছেন আর শহিদ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন দু'জনে।

ফাজিল নগর গ্রামের চয়েনদ্বির ছেলে তালেব ও পাশ্ববর্তী বাঙ্গালা ইউনিয়নের বানিয়াকৈর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে সুজনের (৩০) পরিবারেও চলছে শোকের মাতম।
গারেশ্বর গ্রামের নিহত শ্রমিকের কবর খনন কাজে নিয়োজিত জহির উদ্দিন (৬৫) ও আব্দুস সালাম (৪০) জানান, এর আগে কখনও এ অঞ্চলের কোন গ্রামেই এক সঙ্গে ছয় ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তারা শোককে বুকে চেপে কবরগুলো খনন করছেন। অপরদিকে, এলাকাবাসী দরিদ্র পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

উল্লাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকরাম আলী ও উধুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হামিদ জানান, সকালে ছয়টি লাশ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ত্রান ও পুনর্বাসন তহবিল হতে প্রত্যেক লাশ পরিবহন ও সৎকারের জন্য দেওয়া ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়।


বিডি-প্রতিদিন/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর