২৯ মে, ২০১৬ ১৬:০৮
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে

সুন্দরবনে ৭ বনদস্যুর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ স্থগিত

শেখ আহ্সানুল করিম, বাগেরহাট


সুন্দরবনে ৭ বনদস্যুর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ স্থগিত

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য অস্ত্র-গোলাবারুদসহ সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ বনদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রধানসহ সাত বনদস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন। রবিবার ভোরে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের চরাপুটিয়া এলাকায় ৫১টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও  প্রায় ৫ হাজার রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদসহ তারা আত্মসমর্পণ করেন। 

অস্ত্র-গুলি জমা দিয়ে বনদস্যুরা এখন র‌্যাব- ৮ এর হেফাজতে রয়েছেন। তবে দুপুরে মংলায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পনের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। 

দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টারে করে মংলায় আসতে পারেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এলিট ফোর্স র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুরা হলেন: বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠাখালী এলাকার আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী প্রধান মো. মোস্তফা শেখ ওরফে কাদের মাষ্টার, একই এলাকার ইসমাইল খাঁনের ছেলে মো. সুলতান খাঁন, রামপাল উপজেলার বড় কাঠালিয়া এলাকার ইউসুফ আকনের ছেলে সোহাগ আকন, একই এলাকার আহাদ আলী শেখের ছেলে মো. ফজলু শেখ, শ্রীফলতলা গ্রামের সফরুল শেখের ছেলে সোলাইয়াম শেখ, খুলনার দাকোপ উপজেলার মো. মতলেব শেখের ছেলে শাহীন শেখ ও সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মোনাগাছার নুরুল ইসলাম সরদারের ছেলে সুমন সরদার। 

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সুন্দরবনের গহীনে অরন্যে দাঁপিয়ে বেড়ানো বনদস্যু মোস্তফা শেকের নেতৃত্বে মাষ্টার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্নভাবে আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজছেন, এমন খবরের ভিত্তিতে র‌্যাব গোয়েন্দা দল তৎপরতা শুরু করে। এক পর্যায়ে মাষ্টার বাহিনীর সদস্যদের সাথে র‌্যাব যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়। রবিবার সকাল ৬টায় আত্মসমর্পণের সুযোগ নিতে বাহিনীর প্রধানসহ মাত্র ৭ বনদস্যু সুন্দরবনের চরাপুটিয়া খালে এসে তাদের ব্যবহৃত ৫১টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদসহ র‌্যাব- ৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই বাহিনী  প্রধানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অন্য সদস্যরা আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে পালিয়ে যায়। র‌্যাব এখন এই বাহিনীর অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে মাষ্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ জানান, বাগেরহাটের রামপাল এলাকার এক ইউপি চেয়ারম্যানের হাত ধরে প্রথমে তিনি বনদস্যুতায় নেমে পড়েন। পরে রাজু বাহিনীর সাথে থেকে সুন্দরবনে বনদস্যুতা চালায়। সুন্দরবনের এক সময়ের ত্রাস রাজু বাহিনী থেকে বের হয়ে তিনি নিজেই ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে মাষ্টার বাহিনী গঠন করে বনদস্যুতা চালাতে থাকে। 

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে র‌্যাবের তৎপরতায় ও ক্রসফায়ারে একের পর এক বাহিনী প্রধানসহ বনদস্যু নিহতের ঘটনায় তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মসমর্পণের চেষ্টা করতে থাকে। পরে তারা র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়। রবিবার সকাল ৬টায় বাহিনীর প্রধানসহ মাত্র ৭ বনদস্যু সুন্দরবনের চরাপুটিয়া খালে এসে তাদের ব্যবহৃত ৫১টি বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদসহ র‌্যাব- ৮ এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মাষ্টার বাহিনী প্রধান মোস্তফা শেখ আরও জানান, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।

র‌্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের পশ্চিম উপকূল এবং সুন্দরবনের জেলে-বনজীবীদের ত্রাস ছিল বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী। ফিশিং ট্রলার, নৌকা ও জালের হিসাব করে নির্ধারিত হারে প্রতি মাসে মাষ্টার বাহিনীকে চাঁদা দিতে হতো জেলে ও বনজীবীদের। এতোদিন সুন্দরবনের জেলে-বনজীবীদের অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন এই বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা। 

 


বিডি-প্রতিদিন/ ২৯ মে, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর