২৫ জুন, ২০১৬ ২১:৫৯

রূপগঞ্জে অনুমোদনহীন পাথরের মিলে বাড়ছে মৃত্যু, নেই প্রতিকার

রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ) প্রতিনিধি:

রূপগঞ্জে অনুমোদনহীন পাথরের মিলে বাড়ছে মৃত্যু, নেই প্রতিকার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পাবই এলাকার একটি অনুমোদনহীন পাথরের মিলে বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত পাউডারে পর্যায়ক্রমে সাত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষাক্ত ক্যামিকেলের কারণে পর্যায়ক্রমে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

অনুমোদনহীন পাথর মিলটি বন্ধের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। শনিবার সকালে বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত পাউডারে অসুস্থ্য রমজান মোল্লা নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ বছর আগে পাবই এলাকায় অনুমোদনহীন এসপি পাওয়ার নামে একটি পাথরের মিল স্থাপন করা হয়। ওই মিলে ক্যামিকেলের মাধ্যমে পাথর গুড়ো করে পাউডার তৈরি করা হয়। মিলে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিকই স্থানীয় বাসিন্দা। 

পাথর থেকে গুড়ো করে তৈরি করা ক্যামিকেল মিশ্রিত পাউডার মিলের আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংশের দিকে চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার ফলজ গাছ মরে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। মিল মালিক নবী হোসেন স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও পায়না। আর প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। 

অভিযোগ রয়েছে, এ পর্যন্ত বিষাক্ত ক্যামিকেলে অসুস্থ্য হয়ে সাত শ্রমিককের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে উপজেলার পাবই এলাকার আব্দুর রশিদ মোল্লার ছেলে রমজান মোল্লা (৩৬), মৃত আক্কাস আলীর ঝেলে তাহাজ উদ্দিন (৩৩), মৃত বিল্লাল হোসেনের ছেলে বশির উদ্দিন (২৮), সিরাজুল ইসলামের ছেলে মনির হোসেন (৩২), মোন্তাজ উদ্দিনের ছেলে ইউনুছ আলী (৩৮), নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার মর্জাল এলাকার ফরিদ মিয়া (৩৩) এর নাম জানা গেছে। এছাড়া বর্তমানে অসুস্থ্য অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, পাবই এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে রমিজ উদ্দিন (২৫) ও বিল্লাল হোসেনের ছেলে শাহ আলম (৩০)। 

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানান, অধিক বেতন-ভাতার প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় যুবকদের শ্রমিক হিসেবে  যোগদান করানো হয়। সেখানে ক্যামিকেল মিশ্রিত পাথরের পাউডার নাকে-মুখে দিয়ে প্রবেশ করে শ্রমিকরা আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পরে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অসুস্থ্য শ্রমিকদের কোন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা করা হয় না। এছাড়া অসুস্থ্য হয়ে মারা যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারকেও সহযোগিতা করা হয়না। 

স্থানীয় সাংবাদিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সরকারী অনুমোদন পত্র দেখতে চাইলে মিল ম্যানেজার শাহ আলম এসবের কিছুই দেখাতে পারেননি। শ্রমিকদের অসাবধানতার কারনে অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সাবধানতা অবলম্বন করলে অসুস্থ্য বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো না বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। 

এ ব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদ বলেন, ক্যামিকেল মিশ্রিত পাউডার শ্বাসণালীতে গিয়ে নিউমোকোনিয়াসিস নামে রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে। হয়তো ওই শ্রমিকরা এ রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে সবেমাত্র জানলাম। ওই মিলের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও সরকারী অনুমোদন পত্র আছে কি না তা যাচাই করা হবে। না থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

 

বিডি প্রতিদিন/২৫ জুন ২০১৬/হিমেল-২২

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর