২৯ জুলাই, ২০১৬ ১৬:৪৭

ঝিনাইদহে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এলাকাবাসীর সড়ক অবেরাধ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এলাকাবাসীর সড়ক অবেরাধ

ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের ডাকবাংলা বাজার এলাকায় রাস্তা তৈরীর নামে এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাল রাস্তা খুঁড়ে রাখার প্রতিবাদে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার দুপুরে এ সড়ক অবরোধে ওই সড়কে এক ঘন্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল। 

এসময় দুই পাশে শত শত পরিবহন আটকে পড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ কর্মসূচিতে বৈডাঙ্গা, বাটিকাডাঙ্গা, ডহরপুকুর, বাথপুকুর ও নারায়নপুরসহ আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। অবরোধ শেষে রাস্তার উপরে হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি মেম্বর হুসিয়ার হোসেন, ড্রাইভার নুর ইসলাম সরকার, ওহিদুল ইসলাম, রাজু আহম্মেদ শিপন ও টোকন প্রমুখ । রাস্তা অবরোধকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের উত্তর নারায়ণপুর থেকে বৈডাঙ্গা বাজার প্রায় এক কিলোমিটার ভাল রাস্তা দেড় বছর ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। 

তারা বলেন, অন্যান্য ঠিকাদাররা রাস্তার বিভিন্ন অংশের নির্মান কাজ শেষ করলেও সুমন এন্টারপ্রাইজ রাস্তার কাজ না শেষ করেই এভাবে ফেলে রেখেছে। খুঁড়ে রাখার কারণে রাস্তার উপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেই গর্তে যানবাহন পড়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। 

এদিকে রাস্তা অবরোধের পর পুলিশ দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা মুজিবনগর রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহের অংশে ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু নির্মান কাজ শুরু থেকেই ফাঁকিবাজীর আশ্রয় নেওয়া হয়। মাটির কাজ না করেই কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগী করে নেওয়া হয়েছে। 

অবরোধকারীরা সিডিউল দেখিয়ে অভিযোগ করেন, প্রতি কিলো রাস্তা ৩ কোটি টাকার নির্মান ব্যায় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি কিলোতে বেস টাইপ ওয়ান নির্মান ব্যায় ধরা হয় ১ কোটি টাকা, বেস কোর্স ওয়ারিং কোর্স করতে প্রতি কিলোতে বরাদ্দ দেড় কোটি টাকা ও প্রতি কিলোতে ৫০ লাখ টাকার মাটির কাজ রয়েছে। বেস টাইপ ওয়ানে ৪ ঝুড়ি পাথর ও এক ঝুড়ি বালি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে সিডিউলে। সেখানে কাজ করা হয়েছে ঠিক উল্টো। যা এলজিইডির ল্যাব টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করলে এই পুকুর চুরির ঘটনা ধরা পড়বে। 

এলাকাবাসী জানিয়েছে, প্রতি কিলোতে মাটির কাজ রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। কিন্তু রাস্তার সাইড প্রশস্ত করণে কোন মাটির কাজ করা হয়নি। রাস্তা তদারকি কর্মকর্তা এসও আহসানুল হক প্রতি কিলোতে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বিল দিয়েছেন বলে অভিযোগ। 

ঠিকাদারদের একটি সূত্র জানিয়েছে, আনলিমিটেড ঘুষ নেওয়ার কারণে রাস্তার কাজ মান সম্মত হয়নি। তাদের ভাষ্য মতে, ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকারের রাস্তা উন্নয়নের টাকা ভুয়া পাইলিং, রং, রাস্তার পাশ পরিস্কার, মালামাল সপ্লাই, বালি, ইট ও মাটির কাজ দেখিয়ে হরিলুট করা হচ্ছে। এছাড়া ২৫ হাজার টাকার কোটেশন দেখিয়ে মাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছে এসও আহসান ও মনিরুল। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, মাটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। রাস্তার কাজ এখনো চলমান। তাই টাকা তছরুপের বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি বলেন, সুমন এন্টারপ্রাইজকে চিঠি দিয়ে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও তিনি রাস্তার কাজ শেষ করছেন না। ফলে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের উত্তর নারায়ণপুর থেকে বৈডাঙ্গা বাজার পর্যন্ত রাস্তা খুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। তিনি ভুয়া কোটেশন ও বিল ভাউচারে সড়কের টাকা হরিলুটের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

 

বিডি প্রতিদিন/২৯ জুলাই ২০১৬/হিমেল-২২

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর