২ আগস্ট, ২০১৬ ২২:৪৯

চার বছরেই বৃদ্ধ মাগুরার বায়জিদ!

অনলাইন ডেস্ক

চার বছরেই বৃদ্ধ মাগুরার বায়জিদ!

চার বছরের শিশু বায়জিদের দিকে তাকালে চমকে উঠবেন যে কেউ। জন্ম ২০১২ সালের ১৪ই মে। সেই হিসেবে বয়স এখন চার বছরের কিছু বেশি। এরইমধ্যে তার শরীর বার্ধক্যে 'আক্রান্ত'। ঠিক যেন চার বছরের ছোট্ট দেহটার ওপর কেউ বসিয়ে দিয়েছে আশি বছরের বৃদ্ধের মুখ।

বায়জিদের চাহনি, অঙ্গভঙ্গিও অনেকটা বৃদ্ধ মানুষের মতো। শরীর কুঁজো হয়ে গেছে। ঝুলে পড়েছে শরীরের চামড়া।

ডাক্তারদের ধারণা, অত্যন্ত বিরল এবং জটিল কোন জেনেটিক রোগে আক্রান্ত বায়জিদ। এ ধরণের বিরল 'জেনেটিক ডিজঅর্ডারে' আক্রান্ত আরও একশোর বেশি শিশু আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ডাক্তারি ভাষায় এর নাম 'প্রোজেরিয়া' বা 'হাচিনসন-গিলফোর্ড প্রোজেরিয়া সিনড্রোম'।

মূলত এই রোগে আক্রান্তরা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ছয়গুন দ্রুত হারে বুড়িয়ে যেতে থাকে।

বায়জিদ শিকদার ঠিক প্রোজেরিয়াতেই আক্রান্ত কিনা, সেটা কোন চিকিৎসক এখনো নিশ্চিত করেননি। তবে বায়জিদের সমস্ত লক্ষণই মিলে যায় প্রোজেরিয়ার লক্ষণের সঙ্গে।

মাগুরার খালিয়া গ্রামের লাভলু শিকদার আর তৃপ্তি খাতুনের প্রথম সন্তান বায়জিদ। ২০১২ সালের ১৪ই মে মাগুরার এক সরকারি হাসপাতালে বায়জিদ জন্ম নেয়।

সদ্যজাত শিশুর মুখ দেখেই চমকে উঠেছিলেন বাবা-মা। একটা কংকালসার ছোট্ট দেহের ওপর ঝুলে আছে চামড়া। ভড়কে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরাও। এরপর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটি। কিন্তু সমাধান মেলেনি।

রঙ মিস্ত্রি লাভলু শিকদার সন্তানকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন ফরিদপুরের হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তাররা জানালেন তাদের অসহায়ত্ব। বায়জিদকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসতে থাকে মানুষ। দিন দিন দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে বায়জিদ।

লাভলু শিকদার জানান, জন্মের পর প্রথম চার-পাঁচ মাস মায়ের বুকের দুধ খেয়েছে বায়জিদ। এর পর আর সব শিশুর মতো ভাত এবং অন্যান্য খাবার খেতে শুরু করে। এখনো স্কুলে যেতে শুরু করেনি বায়জিদ। বাড়িতেই পড়াশুনা করে।

বায়জিদের বাবা বলেন, তার ছেলের স্মৃতিশক্তি অনেক ভালো। যে কোন কিছু একবার শুনলেই মনে রাখতে পারে। তিনি চান তার সন্তানটি আর দশটা শিশুর মতো সুস্থ হয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার সামর্থ্য তার নেই।

প্রোজেরিয়া রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৬টি দেশে এই রোগে আক্রান্ত ১৩৪ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। এটি বিশ্বের বিরলতম রোগগুলোর একটি।

খুব সহজ করে বলতে গেলে, প্রোজেরিয়ায় আক্রান্তদের বয়স বাড়ে খুবই দ্রুত। ফলে এরা সাধারণত ১৪ বছরের মধ্যেই মারা যায়। তবে বায়জিদ ঠিক এই রোগে আক্রান্ত কিনা তা এখনো কোন চিকিৎসক তার বাবা-মাকে নিশ্চিত করেননি।

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর