২৫ আগস্ট, ২০১৬ ২৩:৩৭
ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে যৌন হয়রানির অভিযোগ

'স্যার রাতে তার বাসায় যেতে বলেন'

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ:

'স্যার রাতে তার বাসায় যেতে বলেন'

ঘুষ বাণিজ্যের পর এবার কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলো ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। আব্দুল মোত্তালেব সরকার নামে ওই উপ-সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করেছেন একই অফিসের অফিস সহকারী রুখসানা আফরিন। পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগ করার পর বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে।

বুধবার ডিজি অফিসের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর অভিযোগটি তদন্ত করেন। বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসের সব কাজ বন্ধ করে তদন্ত করা হয়। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা নাসরিন পারভিন নুপুর অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। তদন্তকালে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পান তিনি।
পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে রুখসানা আফরিন উল্লেখ করেন, ঝিনাইদহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগদানের পর থেকেই উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। নিজের সংসার ও মান সন্মানের দিকে তাকিয়ে তাকে সংশোধন হওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি আমাকে অব্যাহতভাবে আপত্তিকর ও অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকেন। অফিস শেষ করে বাসায় গেলে তিনি রাতে তার বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন, যা আমার জন্য খুবই লজ্জা ও মানসিক যন্ত্রনার। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই তিনি আমাকে আপত্তিকর প্রস্তাব দিলে আমি এর প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকে অফিসিয়ালভাবে ক্ষতি করার হুমকী দেন। তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৭ আগষ্ট তিনি আমাকে বিনা অপরাধে শোকজ করেন। ৯ আগষ্ট আমি তার চিঠির উত্তর দিলে তিনি সন্তোষজনক হয়নি বলে চিঠি ফেরৎ দেন। এরপর তিনি আমাকে হুমকী ও চাপ প্রয়োগ করে চিঠি সংশোধন করে তার মতো করে জবাব প্রদানে বাধ্য করেন। ফলে আমি এখন স্বাভাবিকভাবে অফিস করতে পারছি না। আমাকে হুমকী দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে পাসপোর্ট গ্রাহকদের অভিযোগ উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকারের দুর্ব্যবহারে তারা সন্তুষ্ট নন। তিনি পাসপোর্ট প্রতি ৯০০ টাকা ঘুষ আদায় করেন। টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘোরানো হয়। ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট করতে গেলে সরকারি ফি বাদেও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা তাকে দিতে হয়। এমন অভিযোগ করেন ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার কমল কুমার। তার কথায় গত ৩১ মে তার কাছ থেকে ২১ হাজার টাকা নেন এ কর্মকর্তা। মহেশপুর এলাকার একাধিক ব্যক্তি এ ধরণের অভিযোগ করেন। দ্রুত পাসপোর্ট প্রদানের কথা বলে ২০/২৫ দিন পর দেওয়া হয়।
কোটচাঁদপুরের লক্ষিপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, পাসপোর্ট করতে এসে তিনি ঘুষ না দেওয়ায় দুই সপ্তাহ ঘুরেছেন। ঘুষ না দিলে এ ভুল, সে ভুল ধরে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের চরম হয়রানি করা হয় বলে তিনি জানান। এ সব কারণে স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের আত্মীয়ের কাছে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার লাঞ্চিত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে পাসপোর্ট অফিসে প্রতিবাদ করলে ডিবি পুলিশের ভয় দেখানো হয়। এ বিষয়ে উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার জানান, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর নিয়মিত ভিজিটে এসেছিলেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। এ সব মিথ্যা এবং বানোয়াট। তাকে সরানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ পাসপোর্ট অফিসে তদন্তে আসা ডিজি অফিসের সহকারী পরিচালক (সংস্থাপন) নাসরিন পারভিন নুপুর মিডিয়ার কাছে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর