২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২০:৫৩

মির্জাপুরের গোড়াই-সখিপুর সড়কের বেহাল অবস্থা

এস এম এরশাদ, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)

মির্জাপুরের গোড়াই-সখিপুর সড়কের বেহাল অবস্থা

কার্পেটিং, ইট, বালু ও খোয়া উঠে গিয়ে খানাখন্দকে পরিনত হয়েছে গোড়াই-সখিপুর সড়ক। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত হয়ে ছোট ছোট পুকুরে পরিণত হয়েছে। বেহাল এই সড়ক দিয়ে যানবাহনগুলো অত্যন্ত ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে বলে জানা গেছে। এজন্য এই সড়কে যাতাযাতকারী যাত্রীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই থেকে সখিপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটি টাঙ্গাইলের পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একমাত্র সড়ক। মির্জাপুর উপজেলা ছাড়াও সখিপুর, কালিহাতি, ঘাটাইল এবং মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের বিরাট এলাকার জনগন এবং মালামাল পরিবহনে ঢাকা ও টাঙ্গাইলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। এই আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ছোট বড় যানবাহন চলাচল করছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানান, এই ব্যাপক সংখ্যক যানবাহন চলাচল এবং বৃষ্টির কারণে ইট, বালু, খোয়া ও বিটুমিন উঠে গিয়ে খানাখন্দকে পরিনত হয়েছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তেও সৃষ্টি হয়ে পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফলে বিপুল সংখ্যক যানবাহন অত্যন্ত ঝু^ঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে বলে জানা গেছে।

এই সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক সাইফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, আজিজুল ইসলাম, ইলিয়াস আলী, বাস চালক রহিম বাদশা, আব্দুল আলীম, ট্রাক চালক আনোয়ার হোসেন, রাজ্জাক মিয়াসহ অনেকেই জানান, গোড়াই থেকে সখিপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে যেখানে বড়জোড় ৪৫/৫০ মিনিট সময় লাগার কথা, সেখানে সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে বর্তমানে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা।
তারা আরও জানান, রাস্তার এই বেহাল অবস্থার দরুন তাদের যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে। তাছাড়া যে কোন সময় এই সড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

সরেজমিনে সোমবার বিকিলে দেখা গেছে, দুপুরের পর বৃষ্টি হওয়ায় সড়কটির গোড়াই এলাকায় পানি জমে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি দিয়ে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া ঝুকি নিয়ে যান চলাচল করছে।

খুলনা-ট-২৩১৭ ট্রাকের চালক মো. আমীর হামজা বলেন, 'ঢাকা থেকে মাল ভর্তি করে সখিপুর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে গোড়াই-সখিপুর সড়কের গোড়াই এলাকায় খানাখন্দের সৃষ্ঠি হওয়া পানির নীচে গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। সন্ধা ৬টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও গাড়িটি তুলতে পারেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন'।

গোড়াই সাউথ ইস্ট ফেব্রিক্্র এর শ্রমিক দিলদার হোসেন বলেন, '৩/৪ বছর আগে সড়কটি দিয়ে সখিপুরে যোগাযোগমন্ত্রী যাওয়ার কারণে সড়টি মেরামত করা হয়েছিল। সড়কটি ৩ বছরও টিকেনি। তাছাড়া সড়কটিতে জনযান চলাচলের উপযোগী করতে মীর মঈন হোসেন রাজীব নামে এক যুবলীগ নেতা নিজ উদ্যোগে কয়েক দফা গোড়াই এলাকায় ওই স্থানে ইট ও বালু ফেলে সংস্কার কাজ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন'।

এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বিএসসি, লাল মিয়া, ইয়াকুব আলী, জসিম খান, আব্দুস সামাদ, আজাহারুল ইসলাম, নুরু মিয়া জানান, সড়কটির দুরাস্থার কারণে যাত্রীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের বেগুন চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ঢাকা থেকে পাইকার না আসায় তারা কম দামে বেগুন বিক্রি করছেন বলে কৃষক হালিম, আলমগীর, ফেরদৌস পাহাড়ী, ফরহাদ হোসেন জানান। তারা দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বেলতৈল গ্রামের বাসিন্দা রফিক শিকদার বলেন,'গোড়াই-সখিপুর সড়কটির পাশ খুব কম। দুটি গাড়ি পার হওয়ার সময় সড়কের দুই পাশের কার্পেটিং ধসে পড়ে। পরে সড়কটি অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে জনযান চলছে ঝুকি নিয়ে। ভারি বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে জনযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন'।
 

এছাড়া স্থানীয় সাংসদ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ মো. একাব্বর হোসেনের প্রচেস্টায় ২৭ কিলোমিটার এই সড়কটি সংস্কারের জন্য ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বরাদ্ধ হয়েছে। চট্রগ্রামের ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছেন। তিনি গোড়াই এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে রিজেক্ট ট্রিটমেন্ট (সংস্কার) কাজ শুরু করেছেন। পর্যায়ক্রমে ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৬ মিটার এলাকায় রিজেক্ট ট্রিটমেন্ট এবং বাকি সড়কটিতে ওভারলে (মেশিনের দ্বরা) কার্পেটিং করা হবে বলে তিনি জানান।

বিডি-প্রতিদিন/২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৬/তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর