২২ অক্টোবর, ২০১৬ ১২:৪৯

সততা চর্চার কেন্দ্র 'গুডনেস সপ'

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

সততা চর্চার কেন্দ্র 'গুডনেস সপ'

খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল, পেনসিল কাটার, বিস্কুট সাজিয়ে রাখা নানা ঝুড়িতে। প্রত্যেক ঝুড়িতে পণ্যের দাম লেখা রয়েছে। সেখানে একটা কৌটা রাখা। শিশুরা আসছে, যে যার দরকারমতো ঝুড়ি থেকে খাতা, কলম, পেনসিল বা রাবার তুলে নিয়ে কাগজে লেখা দাম দেখে ওই কৌটার মধ্যে টাকা রাখছে। বলা হচ্ছে, এটা কোনো দোকান নয়, এটা শিশুদের সততা চর্চার একটা কেন্দ্র।

এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মোহাম্মদপুর গিলাবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবিব। সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় পেন্সিল, কলম, জ্যামিতি বক্স, বিস্কুট সহ বিভিন্ন পণ্য সাজানো। দোকান আছে, ক্রেতাও আছে কিন্তু নেই শুধু বিক্রেতা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছা মতো পণ্য নিচ্ছে আর দাম পরিশোধ করছে।

স্কুলের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে একটা সভা করেন। সেখানে তিনি শিশুদের মধ্যে সততার বোধ জাগানোর জন্য 'গুডনেস সপ' নামের এই দোকান চালুর ঘোষণা দেন।সেদিনই চালু হয় দোকানটি। 

কেনা দামেই সব জিনিস বিক্রির দাম ঠিক করা হয়। কোনো লাভ করা হয় না। বিক্রয় হওয়ার পরে জমা হওয়া টাকা গুনে আবার নতুন করে পণ্য ক্রয় করে আনা হয়। স্কেল কিনতে আসা ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রি লিয়া বলেন, বাইরের দোকান থেকে এ দোকানে দাম কম। তা ছাড়া কেউ টাকা চাচ্ছে না, আমি নিজেই টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছি। এ জন্য আমার খুব মজা লাগে।

বিদ্যালয়ের সপ্তম, অষ্টম, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম, রনি, আসমা, মনিরুজ্জামান এবং রিচি আক্তার বলেন, ক্ষুধা লাগলেই এখান থেকে বিস্কুট কিনে এর দাম বাক্সে রেখে দেই। এখানে বাকিতে পণ্য নেয়ার সুযোগ নেই। টাকা না থাকলে শিক্ষকদের কাছ থেকে ধার নিয়ে খাবার কেনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও এখানে কাগজ, কলম, স্কেল বাইরের থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান-ই-হাবিব বলেন, এই দোকানের মাধ্যমে শিশুদের সততা ও সত্যবাদিতা শেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি, এটা ভবিষ্যতে তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে। মূলত শিক্ষার্থীদের লোভ সংবরণ, সৎ, আদর্শবান এবং একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এই দোকানটি খোলা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো, সোহাগ বলেন, এই ধরনের ব্যতিক্রম উদ্যোগের ফলে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা তৈরি হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহিন আক্তার জানান, এই ধরনের চিন্তা-চেতনা শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

 

বিডি প্রতিদিন/২২ অক্টোবর, ২০১৬/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর