২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ২১:৪০

১৭ শিক্ষকই অনুপস্থিত, হলো না ক্লাস-পরীক্ষা

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:

১৭ শিক্ষকই অনুপস্থিত, হলো না ক্লাস-পরীক্ষা

শিক্ষক নেই, গল্প করেই সময় কাটছে শিক্ষার্থীদের

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্রের নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ও নানা অনিয়মে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষ নজিবুর রহমানসহ ১৭ শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে কোন নোটিস ছাড়াই রবিবার পরীক্ষা ও ক্লাস বন্ধ রাখা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকে। স্কুলে এসে বসে থেকে ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যেতে হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা স্কুলে না আসলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকে ঠিকই। দুই বছরেও স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতির  দেখা মেলেনি। পকেট কমিটি  হওয়ায় কোন প্রকার তদারকি নেই। এ নিয়ে কেউ কথা বলতে গেলে দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, রবিবার নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো সকাল ১০টায়। এছাড়া দুপুর ২টায় ৮ম শ্রেণির পরীক্ষা ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়।  দশম শ্রেণির ছিলো শারীরিক শিক্ষা পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষকদের অনুুপস্থিতিতে কোন পরীক্ষাই হয়নি। মোট ২৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৭ জনই অনুপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত শিক্ষকরা জানান,  নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ নজিবুর রহমান ব্যাপক অনিয়ম করছেন। কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস পান না। প্রতিবাদ করলে বরখাস্তসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়।  ৮ম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা থাকলেও প্রশ্ন ছিলো অধ্যক্ষ নজিবুর রহমানসহ অনুপস্থিত শিক্ষকদের হাতে। তাই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুল এন্ড কলেজের কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও শিক্ষক সঙ্কটের কারনে দুপুরের আগেই শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করে চলে যান। অধ্যক্ষ নজিবুর রহমান বেশিরভাগ সময়ই প্রতিষ্ঠানে আসেন না। তার অনুগত শিক্ষকরা নিজের মতো শিক্ষা কার্যক্রম দিয়ে থাকেন। অনুপস্থিত থাকলেও পরে খাতা-কলমে উপস্থিত দেখানো হয়।

অনুপস্থিত শিক্ষকরা হলেন, অধ্যক্ষ নজিবুর রহমান, আরজিনা বেগম, বিউটি আক্তার, সুলতানা পারভিন, খালেদা আক্তার, সালেহ আহাম্মেদ, সাবিনা আফরোজ, হাসিনা আক্তার, মুকুল হোসেন, সাবিনা ইয়াছমিন, আয়েশা আক্তার, লিটন দাস, জান্নাতুন ফেরদৌস, নারগিছ আক্তার, তানিয়া সুলতানা, হামিদুর রহমান, জসিম উদ্দিন।

অভিভাবক জাফর উল্লাহ জানান, তিনি নবকিশলয় হাই স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম, দুর্নীতি ও নানা অভিযোগের প্রতিবাদ করার কারনে পরিচালনা কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ নজিবুর রহমানের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, জুতা-ঝাঁড়ু– মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তারপরও বহাল তবিয়তে আছেন অধ্যক্ষ নজিবুর রহমান। এছাড়া কয়েক দিন পূর্বে শিক্ষিকা আক্তারুন্নেছাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলাও করা হয়েছে।

রবিবার বিকেলে নজিবুর রহমানের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তে আসেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অধ্যক্ষ নজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে (০১৮১৯-৪০৪৮০৯) যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর ফোন ধরার জন্য মোবাইলে এসএমএস করা হয়।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক নুরে আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, এ ধরনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৭ জন শিক্ষক অনুপস্থিত, এটা হতে পারে না। তদন্ত করে যদি এমন প্রমাণ মেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর