২৬ অক্টোবর, ২০১৬ ১৬:৪৯

২ হাজার টাকার সুদ ১২ হাজার টাকা! ভ্যান চালকের আত্মহত্যা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

২ হাজার টাকার সুদ ১২ হাজার টাকা! ভ্যান চালকের আত্মহত্যা

মাত্র দুই হাজার টাকায় দুই মাসের সুদ দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকা। আর এই সুদের টাকা আদায় করতে জোড় পূর্বক ভ্যান চালকের ভ্যানটি বিক্রি করে দেন সুদখোর এক মহাজন। এরপর সেই ভ্যান চালকের হাতে বিষ খাবার জন্য ৫০ টাকা ধরিয়ে দেন মহাজন। 

এই লাঞ্ছনায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার নতুন চাকলার কেকুপাড়া এলাকার আব্দুল খালেক (২৫)। বুধবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের কেকুপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত আব্দুল খালেক ওই এলাকায় হাফিজ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মায়ের সাথে বাবার জন্য অবিরাম কেঁদে চলেছে আব্দুল খালেকের দুই বছরের মেয়ে খাদিজাও। নিঃস্ব আব্দুল খালেকের দাফন সম্পন্ন করার টাকাও নেই স্ত্রীর হাতে। তাই প্রতিবেশিরা তার দাফন সম্পন্ন করার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা তুলছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে চাকলাহাট ইউনিয়নের ভান্ডারু গ্রামের সুদখোর সুরুত জামালের কাছে দিনে শতকরা ১০ টাকা সুদের হারে ২ হাজার টাকা নেন ভ্যান চালক আব্দুল খালেক। গত দুই মাসে আসল ঐ দুই হাজার টাকার সুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার টাকায়। এই টাকা পরিশোধের জন্য গত এক মাস থেকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে মহাজন। 

গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাতে আব্দুল খালেক টুনিরহাট বাজারে ভ্যান নিয়ে গেলে স্থানীয় ফজুর সাহায্যে ভ্যানটি আটক করে সুরুত জামাল। ৫০ হাজার টাকা দামের ভ্যানটি তিনি ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২ হাজার টাকার সুদ ১২ হাজার টাকা আদায় করেন জামাল। বাকি ২৩ হাজার টাকা ফেরত চাইলে আব্দুল খালেকের হাতে ৫০ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিয়ে বিষ কিনে খেতে বলেন মহাজন। 

লাঞ্ছনা সইতে না পেরে সে রাতেই বিষ পান করেন তিনি। পরে বিষের গন্ধ টের পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে গুরুতর অবস্থায় পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার সকালে সেখানে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আব্দুল খালেক। এ ঘটনায় ওই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা সুদখোর সুরুতজামালসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আব্দুল খালেকের স্ত্রী মহিদা খাতুন বলেন, আমার স্বামীকে মাত্র ২ হাজার টাকার সুদের জন্য সুদখোর সুরুতজামাল ভ্যানটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে নিছে। বাজারের মধ্যে আমার স্বামীকে লাঞ্চিত করেছে। এই কষ্টে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

ওই এলাকায় সফিকুল ইসলাম জানান, সুরুত জামাল উচ্চ হারে সুদ খায়। শতকরা দৈনিক তাকে ১০ টাকা সুদ দিতে হয়। সকালে ১শ' টাকা নিলে সন্ধ্যায় ১শ' ১০ টাকা দিতে হয়। 

তবে সুরুত জামালের সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টার পর তার স্ত্রীর পরিচয়ে ফোন রিসিভ করলেও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এরপর আবারো যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। চাকলাহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। 

 

বিডি প্রতিদিন/২৬ অক্টোবর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর