৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৩:০৭

বগুড়া দুগ্ধ খামারে ২১ বছর ধরে লোকসান গুনছে সরকার

অনিয়ম-দুর্নীতির ছড়াছড়ি

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া:

বগুড়া দুগ্ধ খামারে ২১ বছর ধরে লোকসান গুনছে সরকার

নানা সম্যস্যায় জর্জরিত বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামার। প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো থাকলেও দীর্ঘ ২১ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি খামারটি। উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতা, স্বেচ্ছারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে  জানা যায়, ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার এই খামার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এরপর ১৯৯৩ সালের ১৪ই এপ্রিল ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক সংলগ্ন শেরপুর উপজেলার মহিপুরে ৫৩ দশমিক ১ একর জমির ওপর এই দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খামারটি ১৯৯৫ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়। 

কর্মকর্তা, শ্রমিকসহ ৬৮ জন জনবল ও ২৩৩টি পশু নিয়ে খামারটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই খামারে কর্মকর্তাসহ ও হাজিরা শ্রমিকের সংখ্যা ৫৮জন। আর প্রাণী রয়েছে দুধালো গাভীসহ ২৩১টি। সূত্র জানায়, খামারের ২৪ একর জমির ওপর চাষ করা হয়েছে তিন জাতের ঘাষ। এরমধ্যে দেড় ১ একর পারা, ২ একরে জার্মান ও ২১ একর জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাষ চাষ হয়েছে। 

জানা গেছে, ব্যক্তি খামারের একটি গাভী থেকে প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার দুধ পাওয়া গেলেও এই সরকারি খামারের অনুরুপ একটি গাভী থেকে সর্বাধিক ৪ থেকে সাড়ে ৪ লিটার দুধ মিলছে। এর কারণ অনুসন্ধানে খামারে গেলে ওঠে আসে সেখানকার সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।

দেখা গেছে, অন্তত ৬০০ গবাদি প্রাণী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন খামারের ১০টি সেডের মধ্যে অধিকাংশ সেডই ফাঁকা। ৩-৪টি সেডে ফাঁকা ফাঁকা করে রাখা পশুগুলো অনেকটা কঙ্কাল সার হয়ে দাঁড়িয়ে বা শুয়ে আছে। খাবারের স্থানে কোন খাবার নেই। ড্রেনের মধ্যে শুধু পানি রয়েছে। নেই এক টুকরো ঘাস বা খড়। খামারের পশ্চিম দক্ষিণে অবস্থিত দুধালো গাভী রাখার একটি সেডে দেখা গেছে, সেখানে ড্রেনের নিচ বরাবর পানি কিছু দুধালো গাভী জিব্হা দিয়ে চেটে ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর চেষ্টা করছে। 

এ ছাড়া বাঁকিরা শুয়ে বা দাঁড়িয়ে থেকে এদিক-ওদিক তাকাতাকি করছে। পাশেই গুরুতর অসুস্থ মৃতপ্রায় একটি গাভী পড়ে আছে। কয়েকজন কর্মচারী গাভীটিকে ধরে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। এ সময় উপস্থিত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটিই এ খামারের নিত্যদিনের চিত্র। 

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন একটি দুধালো গাভীকে আড়াই কেজি করে দানাদার খাদ্য দেয়ার কথা। এই খাদ্যের তালিকায় রয়েছে, গমের ভূষি, ভুট্টার ভূষি, ডালের ভূষি, ছোলা, তিলের খৈল, সরিষার খৈল ও বিভিন্ন ডালের ভূষি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এর কোনটাই দেওয়া হয় না। এছাড়া খামারে পর্যাপ্ত ঘাস চাষ হলেও এসব ঘাস পশুগুলোকে খাওয়ানো হয় না, বরং বাইরে বিক্রি করা হয়। 

এভাবে প্রতিবছর গো খাদ্যের সিংহভাগ টাকাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোপাট করা হয়। তাই সব সময় এই বিশাল খামারের স্টোর ফাঁকা পড়ে থাকে। স্টোর কিপার পদে লোক থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে তাকে দেখা যায় না। তিনি অবস্থান করেন রাজবাড়ী জেলা মুরগির খামারে। এছাড়া খামারের উৎপাদিত দুধেরও সঠিক হিসেব দেওয়া হয় না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় অনুপস্থিত থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণী উৎপাদন কর্মকর্তা আলী রেজা আহমেদ  অভিযোগগুলো কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, খামারের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। প্রাণীগুলোও বেশ ভাল রয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয় না বলেও তিনি দাবি করেন।


বিডি প্রতিদিন/০৪ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর