৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৭:৪০

আমার সামনেই বাবা-চাচা-স্বামীকে হত্যা করা হয়, আমাকে ধর্ষণ

অনলাইন ডেস্ক

আমার সামনেই বাবা-চাচা-স্বামীকে হত্যা করা হয়, আমাকে ধর্ষণ

টেকনাফে আশ্রয় নেয়া মোহসিনা

'আমার চোখের সামনে বাবা-চাচা-স্বামীকে হত্যা করা হয়। আমাকে সাতজনে মিলে গণধর্ষণ করে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে ছুটে যাই বাড়িতে। শুধু চার বছরের ছেলেটিকে পাই। তাকে বুকে নিয়ে একজনের সহায়তায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসি। এখন কান্নাও আসে না। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।''

কথাগুলো বলছিলেন রাখাইনের জাম্বুনিয়া থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা মোহসিনা। মোহসিনা বেগমের কোলে ছোট একটি শিশু, বয়স চার বছর। শিশুটি খালি গায়ে মায়ের কোলে খেলা করছে। সে জানে না তার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান স্টেটের নামে মোহসিনা শিশুটির নাম রেখেছেন আরকান।

টেকনাফে শরণার্থীদের থাকার জায়গা লেদা ক্যাম্পে মোহসিনার সাথে দেখা হয় প্রতিবেদকের। মলিন পোশাক আর বিধ্বস্ত চেহারার মোহসিনা বলছিলেন গতমাসে ঠিক কি ঘটেছিল মিয়ানমারে।

'নভেম্বরের ১২ তারিখ। সকাল বেলা হঠাৎ করেই একদল লোক অস্ত্র হাতে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ি ভাংচুর করে আগুন দেয়। বাড়ির পুরুষ, মহিলা শিশু সবাইকে আলাদা করে দাঁড় করানো হয়। মিয়ানমারের রাখাইনের জাম্বুনিয়া এলাকায় বাড়ি মোহসিনার।

মোহসিনা বলছিলেন "পুরুষদের আলাদা করে দাঁড় করায়, সেখানে আমার স্বামী, চাচা আর বাবা ছিল। সাথে ছিল আরো ২৫ থেকে ২৭ জন ওই এলাকার পুরুষ। আর মেয়েদের বলা হয় আলাদা লাইনে দাঁড়াতে। এর পর আমার চোখের সামনেই হত্যা করা হয় পরিবারের তিনজন পুরুষ সদস্যকে।''

"এরপর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের মধ্যে যাদের বয়স অল্প তাদেরকে ধরে বনের মধ্যে নিয়ে যায়। তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন, ধর্ষণ। আমাকে সাতজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে।''

জ্ঞান হারান মোহসিনা। চেতনা ফিরে আসার পর পালিয়ে আসেন সেখান থেকে, কোলের শিশু আরকানের খোঁজে। বাড়ি ফিরে শুধু আরকানকে পান। এরপর নাফ নদী পাড়ি দিয়ে যারা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছেন তাদের দেখা পাওয়ার আসায় নদীর উপকূলে আসেন। ততক্ষণে তিনি অসুস্ত হয়ে পড়েছেন। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। নির্যাতনের চিহ্ন।

হার মোহাম্মদ নামে জাম্বুনিয়ার আরেক ব্যক্তি উদ্ধার করেন মোহসিনাকে।

হার মোহাম্মদ বলছিলেন, "সেদিন রাতে নৌকায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে অনেকেই টেকনাফে আসার চেষ্টা করছিলেন। সেই দলেই মোহসিনাকে নিয়ে তিনি উঠে পড়েন।''

নৌকা পাড়ি দিয়ে টেকনাফের আসার জন্য অবশ্য তাদের গুনতে হয়েছে অর্থ। দালালদের টাকা দিয়ে মোহসিনার মত আরো অনেকেই টেকনাফে এসেছেন নদী পাড়ি দিয়ে।

তবে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে কোন সংবাদদাতা বা মানবাধিকার কর্মী প্রবেশ করতে না পারায় এই সব নির্যাতনের কথা কতটা সত্য সেটা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব না। সূত্র : বিবিসি

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর