৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ২৩:১৯

তাদের ফেরার প্রতীক্ষায় পরিবার

রাহাত খান, বরিশাল:

তাদের ফেরার প্রতীক্ষায় পরিবার

ঢাকার গুলশান থেকে নিখোঁজ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের নয়ঘর এলাকার মেহেদী হাসান ও সুজন ঘরামীর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় তাদের পরিবার। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলের খবর জানতে উন্মুখ সুজনের মা আকলিমা বেগম। অপরদিকে বড় ছেলে মেহেদী হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না- এমন খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা হাওয়া বেগম। গত কয়েকদিনে ছেলে নিখোঁজের বেদনায় কাঁদতে কাঁদতে শয্যাশয়ী এ মা।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মেহেদী ও সুজন কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করলেও এই দাবি পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে দুই পরিবার। বরং তাদের ধারণা কোন কারনে তাদের আটকে রেখেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। পরিবারের এখন একটাই দাবি, তাদের ফেরত পাওয়া।
 
ঝালকাঠী সদর থানার পুলিশ কনস্টেবল বাহেরচর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান বিএম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। প্রেমের সূত্র ধরে গত ৬ মাস আগে প্রতিবেশী বিএম কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শারমীন আক্তার রিংকিকে বিয়ে করেন। কোন পদ-পদবী না থাকলেও মেহেদী স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন তার বাবা পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি আরো জানান, র‌্যাগস্ সনিতে একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা যায় মেহেদী। ঢাকায় রায়ের বাজারে তার ফুফুর বাসায় ওঠে সে। গত পহেলা ডিসেম্বর ল্যাপটপ মেরামতের কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ওইদিন রাতে তার স্ত্রী রিংকি মেহেদীর দুটো মুঠোফোনে রিং দিয়ে নম্বর দুটি বন্ধ পান। পরদিন সকালে আবারও দুটি মুঠোফোন নম্বরে রিং দিলে তার দুটি নম্বরই বন্ধ পান।

এরপর তার বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বহুবার চেষ্টা করলেও মেহেদীর নম্বর দুটো বন্ধ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধ্যান না পেয়ে মেহেদী নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত হন তারা।

মেহেদীর নববিবাহিতা স্ত্রী রিংকি বলেন, বিয়ের আগে-পরে তার মধ্যে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেননি তিনি। এলাকায় তার কোন শত্রুও নেই বলে তার দাবি। তিনি মেহেদীকে ফেরত পেতে চান।

একই এলাকার আনিসুর রহমান ঘরামীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সুজন ঘরামী সবার ছোট। অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দিতে ১১ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে নাট্যাভিনেতা সারা যাকেরের এশিয়াটিক ফার্মে চাকরি নেন। সুজনের সততায় মুগ্ধ হয়ে সারা যাকের তাকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করান। মাঝে মধ্যে এলাকায় আসতো সে। প্রতি মাসে ছেলের দেয়া টাকায় সংসার চলতো আকলিমা বেগমের। অপরিচিত কাউকে দেখলেই ছেলের খবর জানতে চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সুজন কোন জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত হতে পারে না বলে তাদের দাবি।

এদিকে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের আল জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাস মাদ্রাসার নিখোঁজ ছাত্র নেয়ামতুল্লাহরও (১৬) কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি গত নয় দিনে। গত ৩০ নভেম্বর মাদ্রাসা থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের তিন দিন পর গত ৩ ডিসেম্বর নেয়ামতুল্লাহ তার মা কোহিনুর বেগমের ০১৭৬৮৪৬৪২৮১ নম্বরের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে লিখেছে, “মা, আমি ভাল আছি। আমার জন্য কোন চিন্তা করবা না। আমি আল্লাহর পথে চলে গেলাম”। এরপর থেকেই চরম উদ্বেগে রয়েছে তার পরিবার। এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন নেয়ামতুল্লাহর বাবা বাকাল গ্রামের খোরশেদ বেপারী। নিখোঁজ ছেলের চিন্তায় নেয়ামতুল্লাহর পরিবারের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার এসএম আক্তারুজ্জামান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ নিখোঁজ হলে সেটি আতংকের বিষয়। ঢাকায় নিখোঁজ বাবুগঞ্জের দুই যুবক এবং আগৈলঝাড়ার মাদ্রাসা ছাত্রকে খুঁজে বের করতে পুলিশের সবগুলো ইউনিট সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর