১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১০:২৮

সচিব-প্রকল্প সবই ভুয়া!

সাখাওয়াত হোসেন সাখা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম):

সচিব-প্রকল্প সবই ভুয়া!

'বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান কমিশনের যৌথ উদ্যোগে প্রচলিত প্রমোট (বিদ্যালয় উন্নয়ন-দ্বিতীয় প্রকল্প) আপনার বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য এককালীন কিছু আর্থিক সাহায্য করতে ইচ্ছুক। চিঠি পাওয়া মাত্রই-০১৫৫৬৫৫৮৩১৪ নম্বরে কথা বললে বাধিত হব।'- এমন বার্তা সম্বলিত এম আশরাফুল আলম চৌধুরী (উপ-সচিব) স্বাক্ষরিত একখানা চিঠি পাঠানো হয়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ওই চিঠি দিয়ে প্রেরণকারী অর্থ হাতানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

রৌমারী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর অভিযোগ করে বলেন, "ওই চিঠি পাওয়ার পর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি আমি। উনি আমাকে বলেন,  'আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত অর্থ সরাসরি আপনার  নামে চলে যাবে। এ জন্য খরচ হিসেবে আপনি দ্রুত ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিন।' এ অবস্থায় বিষয় যাছাইবাছাই করতে গিয়ে জানতে পারি উপজেলার প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে ওই একই চিঠি পাঠানো হয়েছে। তখন বুঝতে পারলাম এটি এক ভুয়া ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।

একই ধরনের অভিযোগ করেন রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়, যাদুরচর উচ্চ বিদ্যালয়, টাপুরচর বিজি উচ্চ বিদ্যালয়, রৌমারী বালিক উচ্চ বিদ্যালয়, কেরামতিয়া ফাযিল মাদ্রাসা, কোমরভাঙ্গি উচ্চ বিদ্যালয় ও দাঁতভাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান। সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা বলেন, "আমরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের 'প্রমোট' নামের কোনো প্রকল্প নেই। তাছাড়া বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য যদি সরকার বরাদ্দ দেয় তাহলে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই সব বাস্তবায়ন হবে। উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। আর ওই এম  আশরাফুল আলম চৌধুরী নামের উপসচিব স্কুলে স্কুলে ফোন করে, চিঠি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করছে। "

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই চিঠি উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানেই পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারা উপজেলায় শিক্ষকদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, "এটা ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল প্রতারণা। প্রকল্পও ভুয়া, সবিচও ভুয়া। এম আশরাফুল আলম চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তি ভুয়া পরিচয় ও তথ্য দিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা করছে।"

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ওই চিঠিতে দেওয়া মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে, 'এম আশরাফুল আলম চৌধুরী নামের ব্যক্তি আমি নই। এটা আমার মোবাইল নম্বর। ওই চিঠি বা প্রমোট প্রকল্প বিষয়ে আমি কিছু জানি না, বলেই ফোন কেটে দেন। ' আবার ফোন করেই জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, 'আমার নাম দিয়ে আপনি কী করবেন? আমি তো বলছি ওই ব্যক্তি আমি নই। হয়তো কেউ নম্বর লিখতে ভুল করে আমার নম্বর দিয়েছে। আমাকে বিরক্ত কইরেন না তো'- বলেই ফের ফোন কেটে দেন তিনি। পরে আর তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মোসলেম উদ্দিন বলেন, "বিষয়টি আমাকে ফোনে করে অনেকে বলেছেন। আমি শিক্ষকদের মামলা করতে বলেছি। কেননা প্রমোট নামের কোনো প্রকল্প নেই। এটা একটা বাটপারি। চিঠিতে যে মোবাইল ফোন উল্লেখ করা হয়েছে সেই নম্বরের সূত্র ধরে ওই ডিজিটাল বাটপারকে গ্রেফতার করা উচিত। "


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর