১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৫:১৪

টাঙ্গাইলে যৌতুকের দাবিতে স্বামীর নির্যাতনে মৃত্যু শয্যায় গৃহবধূ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলে যৌতুকের দাবিতে স্বামীর নির্যাতনে মৃত্যু শয্যায় গৃহবধূ

টাঙ্গাইলে যৌতুকের দাবিতে স্বামী, শ্বশুর-শাশুরির নির্মম নির্যাতনে ৭ দিনের কন্যা সন্তান নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ফাতেমা খাতুন লিয়া (২৫)। জেলার ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চাঁন আমুলা গ্রামে। ফাতেমা বর্তমানে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাত নম্বর ওয়ার্ডের তের নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনা ফাতেমার পিতা তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে স্বামী শফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে শাশুরি মোছা: রোকেয়া বেগম ও শ্বশুর মো.আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। 

জানা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চাঁন আমুলা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শফিকুল ইসলামের সাথে ছয় বছর আগে একই উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে ফাতেমা খাতুন লিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে শফিকুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা ও মেয়ের গহনা বাবদ ২ ভরি স্বর্ণ প্রদান করেন তোফাজ্জল হোসেন। বিয়ের পর কিছুদিন ভালোই চলতে থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন। 

দুই বছর পরে তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। ওই কণ্যা সন্তানই কাল হয় ফাতেমার জীবনে। স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরি মিলে নানা অজুহাতে অত্যাচার চালাতে থাকে তার উপর। দাবি করতে থাকে মোটা অঙ্কের টাকার যৌতুক। এদিকে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বাবা আরও ৭০ হাজার টাকা দেয় স্বামী শফিকুল ইসলামকে। তাতেও মন ভরেনা তার। দাবি করে আরও এক লাখ টাকা। 

ফাতেমা ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে তার উপর। প্রতিনিয়তই চলতে থাকে নির্মম অত্যাচার। এক সপ্তাহ আগে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় ফাতেমা। এতে আরও মাথা বিগড়ে যায় স্বামী শফিকুলের। গত মঙ্গলবার রাতে স্বামী শফিকুল ইসলাম, শাশুরি রোকেয়া বেগম ও শ্বশুর মো.আব্দুল হামিদ ফাতেমার ঘরে প্রবেশ করে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে। 

এক পর্যায়ে শ্বশুর-শ্বাশুরি হাত-পা ধরে রাখেন আর স্বামী শফিকুল ইসলাম ধারালো দা দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে থাকে। এসময় ফাতেমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এঘটনায় ফাতেমার পিতা তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে স্বামী শফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে শাশুরি রোকেয়া বেগম ও শ্বশুর মো.আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

শনিবার টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাত নম্বর ওয়ার্ডের তের নম্বর বেডে গিয়ে দেখা যায়, মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বাকরুদ্ধ ফাতেমা। আর তার পাশে শুয়ে হাত-পা নাড়াচ্ছে ৭ দিনের কন্যা সন্তান অহনা। যে সময় মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার কথা ছিল, ঠিক সে সময় বাবা নামক হিংস্র নরপিচাশের থাবায় মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুটি। মাথা ও ঘাড়ে বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে ফাতেমার। পাশে আহাজারি করছেন ফাতেমার মা হালিমা ও বাবা তোফাজ্জল হোসেন। 

ফাতেমার মা হালিমা বেগম জানান, আমার মেয়ের কোন দোষ ছিলনা। তারা নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে আমার মেয়েকে। আমি তাদের কঠিন শাস্তি চাই। 

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ একেএম কাওছার চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

 

বিডি প্রতিদিন/১০ ডিসেম্বর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর