শিরোনাম
১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ১০:৩৪

মাছ নেই, পঞ্চগড়ের ৩৩টি শুকনো নদীতে চলছে ধান চাষ

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

মাছ নেই, পঞ্চগড়ের ৩৩টি শুকনো নদীতে চলছে ধান চাষ

নলকুড়া গ্রামের দুলাল (৪৫) আর সবুজ (২৩) মাসে প্রায়ই করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে যান। সারাদিনের কাজ শেষে সেদিনও রাতে করতোয়ায় গিয়েছিলেন। কিন্তু নদীর যে এলাকায় তারা মাছ ধরেন কিছুক্ষণ আগেই অন্য আরেকটি দল আসায় মাছ পাননি তারা। তাই আশাহত হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছিল। 

পথের মধ্যে ব্যাটারিচালিত ভ্যান থামিয়ে লাল চায়ের কাপে হাতের তালু গরম করতে করতে নিজেদের মধ্যেই আলাপ করছিলেন। আগের নদী আর এখনকার করতোয়া। আগে ২০ মিনিটে বোঝাই হয়ে যেতো মাছের খলই। এখন খালি হাতে ফিরতে হয় বাড়ি। সবুজ কলেজের ছাত্র। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন সে গল্প। করতোয়ার বুক থেকে তখন ভেসে আসছিল কুয়াশা। তুলার ডাঙ্গা বাঁধের উপর ছোট্ট ঘোণ্টির দোকানে লাল চায়ে চুমুক দিতে দিতে শখের মাছোয়ারদের (যা মাছ ধরে) সাথে গল্প জমে উঠল। 

দুলাল জানান, পঞ্চগড়ের শুকনো নদীর বালু চরে চলছে বোরো ধানের চাষ। তবে বেশি মাত্রায় রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এজন্যই হারিয়ে যাচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী।
 
উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণ আর অবৈধ নদী দখল আর নদী শাষণের ফলে পঞ্চগড়ের ৩৩টি নদ-নদী নাব্যতা হারিয়ে দিন দিন পরিণত হচ্ছে মরা খালে। ক্রমেই শীর্ণ হচ্ছে নদীর প্রবাহ। এসব শুকনো নদীর বালুচর কেটেই পঞ্চগড়ের ভূমিহীন কৃষকেরা এখন চাষ করছে বোরো ধান।

অন্যান্য ফসলের আবাদ না হলেও নদীর বালুকাবেলায় বোরো চাষ করে হাজার হাজার দরিদ্র কৃষক তিন চার মাসের অন্ন জোগাড় করছেন। খরচ কম হওয়ায় লাভবানও হচ্ছেন তারা। 

তবে অধিক ফলনের আশায় কেউ কেউ রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক বেশি ব্যবহার করায় কৃষকের অভাব মিটলেও হুমকির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র্য। নদী হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছসহ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। তাই নদীর বালুচরে বোরো ধান চাষের সময় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ ও মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা।  

কৃষি সম্পসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে  করতোয়া, মহানন্দা, চাওয়াই, কুড়ুম, তালমা, পাম, ডাহুক, গোবরা, বেরং, ছোট যমুনা, ছেতনাই, পেটকি, ঘোড়ামারা, মরা তিস্তা, সুই নদী, আলাইকুমরী, তীরনই, রণচন্ডি, টাঙ্গন, পাথরাজ, ভেরসা, আত্রাই, পাংগা, চিলকাসহ ৩৩ টি নদী এখন বিস্তীর্ন বালিয়াড়িতে পরিণত হয়েছে।

এসব নদীর বুকেই কৃষকরা বোরো আবাদ করছেন। চলতি বোরো মৌসুমে এই ৩৩ নদীর বালুচরে এ বছর প্রায় ১৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। 

কৃষকেরা জানিয়েছেন প্রতিবিঘা বালুচরে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান উৎপাদন করছেন তারা। লাভ হওয়ায় নদীর আশে পাশের ভূমিহীন কৃষক এবং জেলেরা নদীর বালি কেটে আঁল বেধে বোরো আবাদের উপযুক্ত করে নিচ্ছেন নদীর চর। 

জেলার মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।তাই আবাদ করতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন তারা। 

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বোরো ধান সাধারণত মাজরা পোকা আক্রান্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে নদীর বালুচরে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বোরো লাগানোর পরপরেই জমিতে শুকনো ডাল অথবা বাঁশের কঞ্চি পুতে দিয়ে পাখি বসার সুযোগ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাহলে পাখি পোকা কমাতে সাহায্য করবে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আফতাব হোসেন নদীর তীরে ধান চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবেও বলে জানান তিনি। 


বিডি প্রতিদিন/১৯ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর