১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৬:২৩
পুলিশের প্রতিবেদন

সন্দ্বীপে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান মুখোমুখি, সংঘাতের শঙ্কা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

সন্দ্বীপে এমপি-উপজেলা চেয়ারম্যান মুখোমুখি, সংঘাতের শঙ্কা

চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বড় ধরণের কোন্দল বা নিজ দলের ভিতরেই শত্রুতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে পুলিশ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান মাস্টার এবং পৌর মেয়র জাফর উল্লাহ টিটুর ভয়াবহ দ্বন্দ্বের বিষয়টি জেলা পুলিশের একটি গোপনীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

এ দ্বন্দ্ব মেটাতে না পারলে সন্দ্বীপে মারাত্মক সংঘাত সৃষ্টির আশংকা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (বিশেষ শাখা) কাছে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কাছে গত দুই বছরে জেলার আর কোন উপজেলায় এ ধরণের সংঘাত বা সংঘর্ষের রেকর্ড নেই বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
 
সন্দ্বীপ উপজেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সন্দ্বীপে অতীতের চেয়ে কোন্দল কম হলেও চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে হস্তক্ষেপ না করলে কর্মীরা বিশৃংখল হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
 
তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নব-নির্বাচিত জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম দাবি করেন, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কোন্দল এক সময় ছিল। বর্তমানে নেই। সবকিছু মিলে সন্দ্বীপে উন্নয়নমূলক কাজও চলছে। এখন কোন ধরণের সংঘাতের আশংকা নেই বলে জানান তিনি।
 
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিবেদন উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হয়। সন্দ্বীপের রাজনৈতিক বিষয়গুলোসহ বিভিন্ন বিষয় ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। এটা আমাদের কাজের একটা অংশ। আমাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশের বিশৃংখলার বিষয়গুলো সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১ আগস্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে মুনিরুল আলম মুনির নামে এক যুবলীগ নেতা খুন হন। ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি নিয়ে সরকারি দলের দুই গ্রপের সংঘাতে মো. কবির ও মো.জাহাঙ্গীর নামে দু'জন খুন হয়। চলতি বছরের ১ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সন্দ্বীপের বাউরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন নিহত হন। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার ছোট ভাই জিল্লুর রহমান। এরপর ২৯ এপ্রিল সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের হামলায় বশির আহম্মদ (৩২) নামে এক যুবলীগ কর্মী খুন।

রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১ নভেম্বর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ‘রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত গোপনীয় প্রতিবেদন’ পাঠান সন্দ্বীপ থানার ওসি মুহাম্মদ শামছুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দ্বীপে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান মাষ্টার এবং পৌর মেয়র জাফরউল্লাহ টিটু। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা আছে। পুলিশ প্রতিবেদনে আরো বলা আছে, সংসদ সদস্যের সাথে আছেন সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান বেলাল, যুগ্ম সম্পাদক আলাউদ্দিন বেদন, দপ্তর সম্পাদক আবু তাহেরসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাংশ। মাঠ পর্যায়ে সাংসদের গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা আছে, শাহজাহান মাষ্টার ও জাফরউল্লাহ টিটু এবং তাদের অনুসারীরা সাংসদকে অপদস্থ ও ঘায়েল করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন। তারা সাংসদের কোন অনুষ্ঠানে যান না। এলাকায় হত্যাকান্ডসহ যে কোন ঘটনা ঘটলেই তারা সাংসদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। সাংসদকে বিতর্কিত করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে শত্রুতা বেড়েছে। এ কারণে যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারাত্মক সংঘাত সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনে শাহজাহান মাষ্টার এবং জাফরউল্লাহ টিটু ও তাদের অনুসারীদের সাংসদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর