২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৮:১১

'বাবারে, ভাইরে, একটা মাছ দ্যান'

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

'বাবারে, ভাইরে, একটা মাছ দ্যান'

'বাবারে ভাইরে একটা মাছ দ্যান। স্বামী গ্যাঙ্গে মাছ ধরতে গিয়া মারা গেছে। পোলাপাইন লইয়্যা কি খামু', কুয়াকাটায় মৎস্য আড়ৎ ঘাটে ছোট একটি সন্তান কোলে নিয়ে অসহায়ের মতো বলতে দেখা যায় স্বামীহারা আয়শা বেগমকে। সাগর থেকে মাছ বোঝাই করে ট্রলার আসলেই জেলেদের কাছে এভাবেই আকুতি জানান তিনি। 

কারণ, এই ভিক্ষে পাওয়া মাছ বিক্রি করেই তার সংসার চলে। শুধু আয়েশাই নন, কুড়ানো মাছে জীবিকা নির্বাহ করেন মনোয়ারা, খাদিজা ও মমতাজরাও। কথা বলে জানা যায়, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি তাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। এখন সংসার চলে ভিক্ষায় পাওয়া মাছ বিক্রি করে।

কুড়ানো ওই মাছ শেখ রাসেল সেতুর নিচে বসা বৈকালিন বাজারে বিক্রি করা হয়। ক্রেতারাও অপেক্ষায় থাকেন কখন ওই বাজারে মাছ আসবে। অনেকটা সস্তায় পাওয়া যায় বলে স্বল্প আয়ের মানুষরা এ মাছ ক্রয় করতে বৈকালিন বাজারে ভীড় জমায়। মহাসড়কের মহিপুর শেখ রাসেল সেতুর নিচে প্রতিদিনই বসে কুড়ানো মাছের বৈকালিন হাট। সাগর থেকে আড়ৎ ঘাটে মাছবোঝাই করে ট্রলার আসলেই মাছ কুড়ানোর হুড়োহুড়ি পরে যায়। উপজেলার মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহিপুরের আড়ৎ ঘাটে এ অবস্থা চলে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। 

মধ্যম বয়সী সাজেদা জানায়, স্বামী সাগরে মাছ ধরতে গিয়া তিন বছর আগে মারা গেছে। ছেলে মামুনকে নিয়ে তিনি প্রত্যেক দিন মাছ কুড়াতে আসেন। ওই মাছ বিক্রি করে দেড়-দুইশ টাকায় চাল ডাল কিনে বাড়ি ফিরেন। এ আয় দিয়ে দুই সন্তানের লেখপাড়া ছাড়াও সাত জনের সংসার চলে। 

উপজেলা ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি জেলে নুরু মাঝি বলেন, ওরা আমাদেরই সন্তান। ওইসব মা ও শিশুদের কেউ না কেউ সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ বা মারা গেছে। সহায়তা করার জন্য সকল জেলেদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.কামরুল ইসলাম জানান, সাগরে নিখোঁজ ও নিহত জেলেদের পরিবারকে সরকার সহায়তা করে থাকে। ইতোমধ্যে এ উপজেলার পাঁচ জেলে পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে চেক প্রদান করা হয়েছে।

 

বিডি প্রতিদিন/২০ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা


 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর