শিরোনাম
২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৩:০১

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে প্রাথমিক বিদ্যালয়!

গাজীপুর প্রতিনিধি

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে প্রাথমিক বিদ্যালয়!

গাজীপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে পাশ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই হাই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে চলেছে। ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসীরা দু’টি বিদ্যালয়কে একই ক্যাম্পাসের আওতায় এনে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

এলাকাবাসী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসন এলাকায় বাসন তৈজদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেই ৩৯ নং বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি চার তলা ভবনের নির্মাণ কাজ গত কয়েকদিন আগে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

মাত্র ৩৫ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে একতলা বিশিষ্ট আরও দু’টি ভবন রয়েছে। পশ্চিম পাশের ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক স্কুল চত্বরে বহুতলা একটি ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দেয়। এ ঘোষণায় স্থানীয়দের মাঝে আশার আলো দেখা দিলেও অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণে তা পরিণত হয়েছে ক্ষোভে। কারণ এতে তৈজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একমাত্র প্রবেশ পথটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে ওই বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কর্মচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। ব্যাহত হবে শিক্ষা কার্যক্রম। 

উভয় বিদ্যালয়ে বাসন, ভোগড়া, ইসলামপুরসহ আশেপাশের কয়েক গ্রামের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদের জামাত, জানাযাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণে এখন তা বন্ধ হবার পথে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছে এলাকাবাসী। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নতুন এ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়ায় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধূলা করার আর কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের অসন্তোষের মুখে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার র্ব্তমানে ভবনটির নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখেছেন।

এলাকাবাসীর দাবী, জরাজীর্ণ ভবনটির ওই স্থানে অথবা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরাতন ভবন দু’টির যেকোন একটির উপরে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়াও দু’টি বিদ্যালয়কে একই ক্যাম্পাসের অর্থাৎ সীমানা প্রাচীরের আওতায় এনে উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হলে উভয় বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধূলা এবং এলাকার পরিবেশও উন্নত ও সুন্দর হবে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাসন তৈজদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এম এ আউয়াল এবং দাতা সদস্য মো. সোয়েব আল আসাদ মনির ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুস সামাদ জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চত্বরে স্থান সংকট থাকায় শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীতের জন্য এসেম্বলি, পিটি-প্যারেডসহ খেলাধুলা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ঝুকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন ভবনটি নির্মাণ করলে এ সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। এছাড়া দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে থাকা হাইস্কুলের সীমানা প্রাচীরটি সরিয়ে বিদ্যালয় দু’টিকে একই সীমানা প্রাচীরের আওতায় এনে প্রধান ফটকটি প্রাইমারী স্কুলের প্রবেশ পথে স্থাপন করলে উভয় স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষার্থীর জন্য একই মাঠ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে। এতে আমাদের পক্ষ থেকে বাধা নেই। 

তারা আরও দাবি করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমের ভবনটি ঝুকিপূর্ণ হলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় এক কাউন্সিলর মিলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজশে ওই ভবন ঝুঁকিমুক্ত বলে প্রতিবেদন জমা দেন। হাইস্কুলের একমাত্র প্রবেশ পথ ও প্রধান ফটকের সামনে নতুন ভবন স্থাপনের কাজ শুরু করায় হাইস্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রবেশে বিঘ্ন হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গাজীপুর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম খান বলেন, নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মাণ করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোলা জায়গা কমে যাবে এবং হাইস্কুলের প্রধান ফটক প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন দু’টির মেরামত করা হলে আরো বেশ কিছুদিন কোন প্রকার ঝুঁকি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। পুরাতন ভবনগুলোর যেকোনো একটির উপরে অনুমোদিত নতুন ভবনটি নির্মাণ করা যাবে। তবে এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাতারা উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করি। 

বাসন তৈজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু অমর চন্দ্র সরকার জানান, বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককেও অবহিত করা হয়েছে। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বিষয়টি দেখার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন।
 
বিডি প্রতিদিন/২১ জানুয়ারি, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর