২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৮:১০

পাবনায় চলছে নদী-সড়ক ও হাটের জমি দখলের মহোৎসব

এস এ আসাদ, পাবনা

পাবনায় চলছে নদী-সড়ক ও হাটের জমি দখলের মহোৎসব

সরকার যখন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে, তখন পাবনা জেলায় চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। এ ব্যাপারে প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছে সচেতন জনগণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী সমূহকে দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছেন। আবার উচ্চ আদালতও নদী দখলদারদের কবলমুক্ত করার জন্য রায় প্রদান করেছে। এরপরেও চলছে নদী দখল। একই সঙ্গে চলছে সড়ক, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং হাট-বাজারেরও জমি দখল।
 
পাবনা জেলা প্রশাসক যখন ইছামতী নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ঠিক সেই সময় নতুন করে ইছামতী নদীতে আর সি সি পিলার করে পাকা ইমারত নির্মাণ কাজ করছে প্রভাবশালী মহল। ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিগণ এ ব্যাপারে বেশ উদাসীন। তাদের আচরণ দখলদারদের পক্ষেও বলা যায়। তারা প্রশাসনকে কোন সহযোগীতাতো করছেনই না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে দখলদারদের দখলে ইন্ধন যোগাচ্ছেন।
 
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তারা থানায় এফ আই আর এবং জিডি করছেন কিন্তু তাতে কোন ফল হচ্ছে না। পুলিশ এ ব্যাপারে নির্বিকার। প্রশাসনও কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। জেলার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী  প্রকৌশলী মো: আব্দুর রশিদ জানান, তিনি বারংবার প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়েছেন কিন্তু কোন সহযোগীতা পাচ্ছেন না।

সাঁথিয়া উপজেলা সদরের বোয়াইলমারী মৌজায় ইছামতী নদীতে (আই-৩ প্রধান সেচখাল) আর সি সি পিলার দিয়ে পাকা নির্মাণ কাজ করছে প্রভাবশালী একটি মহল। একইভাবে আর সি সি পিলার দিয়ে হলুদঘর মৌজায় ইছামতী ব্রিজের পাশে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি গত ১৭ জানুয়ারি সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর এফ আই আর করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাঁথিয়াস্থ উপ-সহকারি প্রকৌশলী। নির্মাণ কাজ অব্যাহত আছে। পুলিশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয় নি। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমি কোন অভিযোগ পাইনি।
 
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির জানান, ‘বিষয়টি আমি দেখছি’। এই রিপোর্ট লেখার সময় জানা গেছে হলুদঘর ব্রিজের নিকটস্থ নির্মাণাধীন অবৈধ স্থাপনাটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করেছে পুলিশ। তবে বোয়াইলমারী বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে নির্মাণাধীন পাকা কাজ এখনও চলছে। এদিকে হাটের মধ্যে খাস জমি যা হাট ফেরিফেরির জমি বলে পরিচিত সেসব জমিতে প্রভাবশালীরা পাকা ঘর নির্মাণ করে সেগুলো আবার ভাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে।
 
সাঁথিয়া উপজেলা সদরের বোয়াইলমারি হাটের মধ্যে  (১ নং খাস খতিয়ান ভূক্ত) সরকারি খাস জমিতে (আর এস দাগ নং ১১৫৯ ও ১১৬০ সাঁথিয়া পৌর মেয়র মেরাজ উদ্দিন প্রাং পাকা ইমারত তৈরি করছেন। এছাড়াও তার নিকটবর্তী অপর দুটি প্লটে ( আর এস দাগ নং ১১৫০ ও ১১৫১) আর সি সি পিলার করে পাকা ইমারত নির্মাণ করছেন প্রয়াত অসীত কুমার দাসের পুত্র অসীম কুমার দাস। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করেন, এই জমি আমাদের। কিন্তু প্রকৃত সত্য উক্ত জমি সমূহ সরকারি খাস সম্পত্তি। 

এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমরা অবহিত হয়েছি এসব জসি খাস খতিয়ানভূক্ত। মাপ-ঝোঁক হবে তার পর অবশ্যই ব্যাবস্থা নেয়া হবে। তবে আপাতত যারা নির্মাণ কাজ করছেন তাদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’ 

উল্লেখ্য বোয়াইলমারি বাজারের ১১৬৫ নং দাগের খাস জমি ইতোমধ্যেই বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে বিরাট পাকা ইমারত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্দেশ দেয়ার পরও নির্মাণ কাজ অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালাকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হলে তিনি জানান, ‘সরকারি জমি বা খাস জমিতে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ বা দখল করতে দেয়া হবে না।’

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২১ জানুয়ারি, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৯

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর