২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৫:০৬

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মহান ভাষাসৈনিক গোলাম মোস্তফা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মহান ভাষাসৈনিক গোলাম মোস্তফা

প্রতীকী ছবি

৫২'র ভাষা আন্দোলনে মাদারীপুরে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং এ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের বেশিরভাগই আজ জীবিত নেই। সে সময় যে ১২ জন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম তৎকালীন বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র মাদারীপুরের শিবচরের সন্তান গোলাম মোস্তফা আখন্দ রতন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রয়ারি তারই নেতৃত্বে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশালের ২০০ শতাধিক ছাত্র নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় যান। মহান ভাষা আন্দোলনের জীবন্ত এই কিংবদন্তী বর্তমানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এখনও তার স্মৃতিতে উজ্জল হয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের দিনগুলির কথা।

ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আখন্দ রতন বাংলা ভাষা আন্দোলনের এক অন্যতম সৈনিক। ১৯৪৮ সালে মায়ের ভাষা বাংলাকে গ্রাস করার অপচেষ্টার শুরু থেকেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে মাদারীপুর-এর শিবচরের ছাত্র সমাজ। আন্দোলন গড়ে তোলার সাথে সাথে ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালে। ১৯৫২ সালের রক্তঝরা ঢাকার রাজপথের সেই মিছিলেও অংশ নেন দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় অংশ নেওয়ার জন্য তৎকালীন বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্র মাদারীপুরের শিবচরের সন্তান গোলাম মোস্তফা আখন্দ রতনকে আহ্বায়ক করে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক‘শ ছাত্রের তালিকা করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রয়ারী গোলাম মোস্তফা আখন্দ রতন নেতৃত্বে দিয়ে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল ও শিবচরের ২০০ শতাধিক ছাত্র নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় যান। সে সময়ের স্মৃতি এখনও তাকে আন্দোলিত করে।

বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা রমনী চক্রবর্ত্তীর সহকর্মী হওয়ায় পুর্ব থেকেই গোলাম মোস্তফা রতন ছিলেন প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। তাই ভাষার উপর আঘাত আসতেই মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশালে নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে তুলেন দুর্বার আন্দোলন। আন্দোলন শেষে গোলাম মোস্তফা ফিরে আসেন নিজ গ্রাম মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চররামরায়ের কান্দি গ্রামে । স্থানীয় উমেদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ভাষা সংগ্রামী গোলাম মোস্তফা। যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিশেষ বার্তায় তাকে ডেকে নিয়ে বাসভবনে বৈঠক করে দেশের জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। সেই থেকে জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। সেই সুবাদে জাতির পিতার বাসায় ছিল তাঁর অবাধ যাতায়াত।

জাতীয় স্বীকৃতি না পেলেও ২০১২ সালে এইমওয়ে নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তাঁকে সম্মাননা পদকে ভূষিত করেছে। ভাষা সৈনিক গোলাম মোস্তফা আখন্দ রতন ১৯২৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার উমেদপুর ইউনিয়নের রামরায়ের কান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল গফুর আখন্দ এবং মাতার নাম জীবন নেছা। ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। দেশের জন্য দীর্ঘ সগ্রাম করে এই অকুতোভয় সৈনিক বর্তমানে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চররামরায়ের কান্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে ১২বছর ধরে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুণছেন।

শেষ বয়সে তার বীরত্বের কোন স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে তার মনে। সরকারের তরফ থেকে এই বীরের খোঁজ-খবর নেওয়া এমনটাই দাবি পরিবার ও এলাকাবাসীর।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর