২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ১৮:১৮

নাটোরে তিন দিনব্যাপী জেলা ইজতেমা শুরু বৃহস্পতিবার

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে তিন দিনব্যাপী জেলা ইজতেমা শুরু বৃহস্পতিবার

নাটোরে প্রথমবারের মতো জেলা তাবলীগ জামায়াতের পক্ষ থেকে জেলা ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এই ইজতেমা বৃহস্পতিবার শুরু হবে। চলবে শনিবার পর্যন্ত। 

নাটোর-রাজশাহী বাইপাস সড়কের উত্তরে পাশে পূর্ব তেবাড়িয়ার প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে এই ইজতেমা অনুষ্ঠানের জন্য দুই মাস ধরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তেবাড়িয়া পূর্বপাড়ার মারকাজ মসজিদটিকে ঘিরে চলছে এক মহা কর্মযজ্ঞ। মাঠের পশ্চিম দিকে বিশাল এলাকা জুড়ে মুসল্লিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। বুল ডজার দিয়ে মাটি সমান করে প্যান্ডেল জুড়ে ছাউনি হিসেবে টাঙানো হয়েছে চট। সেখানে নাটোর জেলার সাত উপজেলার জন্য সাতটি এবং নাটোর শহরের জন্য পৃথক একটিসহ মোট আটটি খিত্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এছাড়াও নাটোর জেলায় অবস্থানরত দুইটি বিদেশি জামাতের মুসল্লিরাও এতে অংশ নিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিদেশিদের থাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 

মুসল্লিদের অজু করার জন্য ইজতেমা চত্বর এলাকা ও আশেপাশে থাকা ছয়টি পুকুর ছাড়াও নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক তিনটি চৌবাচ্চা। এতে করে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি এক সাথে অজু করতে পারবেন। 

এছাড়াও ইস্তেঞ্জারদের জন্য বাইপাস সড়কের দক্ষিণে মুসল্লিদের জন্য তেরি করা হয়েছে ৬২০টি টয়লেট। টয়লেট ব্যবহারের জন্য বাইপাস সড়কের নীচে থাকা একটি কালভার্টকে চলাচলের অস্থায়ী পথ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইজতেমা এলাকায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের জন্য আটটি ডিপ সিলিন্ডার টিউওয়েলসহ বসানো হয়েছে ছয়টি সাবমার্সিবল পাম্প। 

সমগ্র ইজতেমা এলাকায় পিডিবির সহযোগিতায় ব্যাপক আলোর ব্যবস্থা ছাড়াও রাতে চলাচলের জন্য নাটোর পৌরসভার সহায়তায় বাইপাস সড়কে তেবাড়িয়া হাট থেকে পিটিআই মোড় পর্যন্ত লাইট লাগানো হয়েছে। ইজতেমা এলাকা সংস্কারে সহায়তা করেছে সদর উপজেলা পরিষদ এবং সমগ্র আয়োজনকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং নাটোরের জেলা প্রশাসক। 

নাটোরে আয়োজিত এই প্রথম এতো বড় ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে ১৫টি সিসি ক্যামেরাসহ পুলিশ কন্টোল রুম ও পুলিশ বক্স। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করতে আজ বুধবার ইজতেমা মাঠে পুলিশের একটি বিশেষ মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই র‌্যাবের পক্ষ থেকে শুরু করা হয়েছে সার্বক্ষণিক নজরদারী। চিকিৎসার জন্য ইজতেমা মাঠের পূর্বদিকে নাটোর সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে অস্থায়ী একটি মেডিকেল সেন্টার। সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স কাজ করবেন। প্রয়োজনে সেখানে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও সরবরাহ করা হবে। 

ইজতেমাস্থলে অগ্নিনির্বাপনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে ফায়ার সার্ভিসের একটি টহল দল। বিশাল এই আয়োজনে নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকার মসজিদের মুসল্লি, মাদরাসা ও এতিম খানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও ধর্মপ্রাণ বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্বেচ্ছায় প্রণোদিত হয়ে কাজ করেছেন। নাম পরিচয় না জানিয়ে ধর্মীয় এই কাজের সব ধরনের সামগ্রীর যোগান দিয়েছেন বড় বড় ব্যবসায়ী ও অর্থবান ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন ইজতেমা মাঠে গড়ে আড়াইশ’জন করে স্বেচ্ছায় শ্রম দিচ্ছেন। 

তাবলীগের মুরব্বীরা আশা করছেন, ইজতেমা মাঠে আটটি খিত্তায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মুসল্লি তিনদিন থাকবেন এবং দ্বিতীয় দিনে জুম্মার নামাজ ও শেষদিনে আখেরী মুনাজাত মিলিয়ে প্রায় এক লাখেরও বেশি মুসল্লির সমাগম ঘটবে। 

বৃহস্পতিবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে তিনদিনে এই ইজতেমা শুরু হবে। কাকরাইল মারজাজ মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকার তাবলীগের মুরব্বীগণ পর্যায়ক্রমে এই ইজতোমায় বয়ান করবেন। শনিবার বেলা বারোটার দিকে আখেরী মুনাজাতে মধ্য দিয়ে ইজতেমা শেষ হবে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুসল্লিরা আসতে শুরু করে দিয়েছেন। ইজতেমাকে ঘিরে তেবাড়িয়া এলাকাসহ সারা নাটোরে এক প্রাণ চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এনায়েত করিম 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর