২৩ মার্চ, ২০১৭ ১৩:৩৪

হাসপাতালের ভুলে দুই ভাইকে নিয়ে বিপাকে পুলিশ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

হাসপাতালের ভুলে দুই ভাইকে নিয়ে বিপাকে পুলিশ

দিনটি ২১ মার্চ মঙ্গলবার। সময় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে বড় ভাই ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। সেই সময়ে বৃদ্ধ বাবা চেয়ার থেকে উঠে দুই ছেলের বিরোধ মেটানোর জন্য তাদের কাছে যাচ্ছিল। কাছে আসতেই তিনি হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে ওই বৃদ্ধের মেঝ ছেলে মানিক তার বাবাকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার সকালে বৃদ্ধ বাবা আব্দুল খালেক (১০১) পরলোক গমন করেন। হাসপাতালে বাবার লাশ নিতে আসলে দুই ভাই আফতাব উদ্দিন (৫৫) ও হিরা মিয়া (৩৫) কে আটক করে ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশ। আর এতে শুধু মৃত আব্দুল খালেকের পরিবারই নয়, দুই ভাইকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশও। কারণ, এই ঘটনায় তো কোন মামলা হয়নি। নেই কোন অভিযোগও।

ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুর সিংগিয়া ছোট খোচাবাড়ি এলাকায়। ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মশিউর রহমান জানান, জগন্নাথপুর সিংগিয়া ছোট খোচাবাড়ি এলাকার আব্দুল খালেকের দুই ছেলের বিরোধ মেটোনোর সময় ঘটনাটি ঘটেছে। মৃত আব্দুল খালেকের নাম হাসপাতালের পুলিশ খাতায় লেখার কারণে তার দুই ছেলেকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু লাশের শরীরে আঘাতের কোন দাগ পাওয়া যায়নি। যেহেতু পুলিশ খাতায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাই লাশ ময়না তদন্তের উপর বাকী বিষয়টি নির্ভর করবে।

আব্দুল খালেকের মেঝ ছেলে মানিক জানান, বাবা পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। ভর্তির সময় মারামারির কথা আসলে হাসতালের জরুরি বিভাগ পুলিশ খাতায় নাম উঠায়। কিন্তু বৃদ্ধ বাবাকে আমার কোন ভাই আঘাত করেনি।

প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী মিজানুর জানান, ছেলেদের আঘাতে চাচা অসুস্থ হয়নি। আমরা প্রতিবেশীরা ঝগড়া মেটানোর সময় হঠাৎ দেখি খালেক চাচা মাটিতে পড়ে আছে। পরে সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। আজ (বুধবার) খালেক চাচার মৃত্যুর খবর শুনলে আমরা হতভাগ হয়ে পড়ি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সদর উপজেলার জগন্নাথপুর সিংগিয়া ছোট খোচাবাড়ি এলাকায় আব্দুল খালেককে (১০১) অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরলে তার চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার সকালে তিনি মারা যান।

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানান, মৃত খালেক ছেলেদের বিরোধ থামানোর সময় ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমরা জেনেছি। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ খাতায় নাম উল্লেখ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, জরুরি বিভাগে কোন রোগী ভর্তি হলে কী কারণ জানতে চাওয়া হয়। মারামারি বা দুর্ঘটনার কারণ হলে পুলিশ খাতায় নাম উঠানো হয়।

অভিযুক্ত ছেলে আফতাব ও হিরা জানান, আমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে কথাকাটি হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি বাবা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আজ সকালে হাসপাতালে বাবা মারা যায়। আমরা বাবার লাশ আনতে আসলে পুলিশ আমাদের থানায় নিয়ে আসে। বৃদ্ধ বাবার সাথে আমাদের কোন প্রকার ঝগড়া বিবাদ ছিল না।

বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর