২৫ মার্চ, ২০১৭ ১৭:০৫

নওগাঁয় ৩৯টি বধ্যভূমিতে আলোক প্রজ্জ্বলন

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ:

নওগাঁয় ৩৯টি বধ্যভূমিতে আলোক প্রজ্জ্বলন

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর প্রথম জাতীয় ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে বর্বর পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরহ ঘুমন্ত বাঙালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা চালায়। যা জাতী আজও ভুলতে পারেনি। আর তাই নওগাঁবাসি আজ একই সাথে ৩৯ বধ্যভূমিতে আলোক প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করবে।

নওগাঁ জেলার গণহত্যা’র পরিপূর্ণ কোন ইতিহাস লিপিবদ্ধ নেই। স্থানীয় সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠন ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’ দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গণহত্যার ইতিহাস সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে নতুন নতুন কিছু তথ্য উঠে এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৯টির মতো গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ গণকবরগুলোর অধিকাংশই আজও অরক্ষিত, অযত্ন ও অবহেলায় পরে আছে। প্রাচীরের অভাবে উন্মুক্ত গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কিছু বধ্যভূমিতে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও একুশে পরিষদের পক্ষ থেকে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। আবার যেগুলোতে স্মৃতিফলক রয়েছে, সেগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নেই। সন্ধ্যায় জেলার ৩৯ টি বধ্যভূমি ও গণহত্যার স্থানসমূহে একই সাথে আলোক প্রজ্জ্বলন করা হবে। শহরের মুক্তির মোড়ে আলোর মিছিলের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সাংসদ আব্দুল মালেক।

নওগাঁয় বধ্যভূমি রয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলার ধামকুড়ি, দোগাছি, ফতেপুর, মোহনপুর, বলিহার, আরজি-নওগাঁ, হাট-নওগাঁ, খাস-নওগাঁ, পার-নওগাঁ, রানীনগর উপজেলার: আতাইকুলা, আত্রাই উপজেলার: বান্দাইখাড়া, সিংসাড়া, মিরাপুর, বৈঠাখালি, পাইকড়া, পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন, বাউল্লাপাড়া, গোয়ালবাড়ি, মান্দা উপজেলার: পাকুড়িয়া, মনোহরপুর, কবুলপুর, কিত্তলী, বদলগাছি উপজেলার: গয়েশপুর, ঐতিহাসিক পাহাড়পুর, চক-গোয়ালি, মহাদেবপুর উপজেলার: বাজিতপুর-চকদৌলত, মহিষবাথান, পত্নীতলার উপজেলার: নিরমইল-হালিমনগর, ধামইরহাট উপজেলার: কুলফতপুর, ফর্সিপাড়া, পাগলা দেওয়ান(নওগাঁ জেলার অংশ), নিয়ামতপুর উপজেলার: ভাবিচা, সাপাহার উপজেলার: সাপাহার, আসড়ন্দ, পাহাড়িপুকুর, পোরশা উপজেলার: শিশাহাট।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে ১৬ এপ্রিল পাকবাহিনী রাজশাহী শহর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে অনেক ছোট-বড় যুদ্ধের ফলে রাজশাহীতে পাঞ্জাবি বাহিনী প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। কর্ণেল তাজের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সৈন্য ও রসদ সংগ্রহ করে শক্তি বৃদ্ধি করে। এরপর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের পাকিস্তানি সৈন্যরা দুটি দলে বিভক্ত হয়। একটি রেলপথে আর একটি নওগাঁর নওহাটা-মান্দা সড়ক পথে। রেলপথের দলটি ২১ এপ্রিল বিশেষ ট্রেন যোগে আত্রাই স্টেশনের পার্শ্বে নদীর তীরে অবস্থান নেয়। বিকেল ৩টার দিক হবে। ঝোঁপঝাড়ে গরীব অসহায় মানুষরা বসবাস করতো ঝুপড়ি বেঁধে। পাকবাহিনীরা ঝুপড়িতে গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। কিন্তু নিহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। 

একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এমএম রাসেল বলেন, বধ্যভূমির ৩৯ স্থানে একই সময় আলোক প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে স্মৃতিফলক নাই, সেখানে স্মৃতিফলক নির্মাণ ও শহীদদের স্বীকৃতি প্রদান এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে গণহত্যার দিবসসমূহ পালন করার দাবী জানান।

বিডি প্রতিদিন/ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর