২৬ মার্চ, ২০১৭ ১৪:৪০

বগুড়ার শেরপুরে আবারও জেগে উঠছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প

আবদুর রহমান টুলু ,বগুড়া

বগুড়ার শেরপুরে আবারও জেগে উঠছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প

এক সময় মাটির তৈরী জিনিসপত্র ছিল বাঙালিদের একমাত্র ঐতিহ্য। কিন্তু নানা প্রতিকূলতা আর কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের এই জনপ্রিয় শিল্পকর্ম। তাই অনেক মৃৎশিল্পী পেশাও বদল করেছেন। তবে পূর্ব পুরুষদের এই শিল্পকে অনেকেই আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদেরই একজন বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের পালপাড়া এলাকার নিখিল চন্দ্র পাল। 

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই কাজেই নিয়োজিত থাকেন তিনি। কারণ এই শিল্পই তার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস। নিখিল চন্দ্র পাল জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এর আগে তার পূর্বপুরুষরা এ কাজ করতেন। আর তাই এ পেশাকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছেন। 

চার সদস্যের পরিবার টিকিয়ে রাখতে এটাই তার একমাত্র ভরসা। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ এই শিল্পকর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। তবে এখানকার দই শিল্পকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন মৃৎশিল্পীরা। কারণ এখানে প্রতিদিন শতশত মন দই তৈরি হয়। এসব দই রাখার জন্য প্রয়োজন হয় মাটির পাত্রের। তাই এসব দইয়ের পাত্র তৈরির চাহিদা অনেক বেশি থাকায় এই শিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।

শুধু নিখিল চন্দ্র পালই নয়। এই উপজেলার পাল সম্প্রদায়ের অন্তত দুই শতাধিক পরিবার মৃৎ শিল্পের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ চলছেন।

জানা যায়, এই উপজেলার মৃৎশিল্পের খ্যাতি ছিল দেশব্যাপী। পৌর শহরসহ উপজেলার খানপুর, সুঘাট ও গাড়ীদহ ইউনিয়নের দুই থেকে তিন হাজার পাল পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো এখানকার মৃতশিল্পীদের হাতে তৈরি মাটির সব জিনিসপত্র। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া, কালের বির্বতন আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটির অবস্থা করুণ। নতুন প্রজন্মের কেউ শিখছেন না মৃৎশিল্পের কাজ। 

কম দামে টেকসই প্লাস্টিক, মেলামাইন, লোহা ও সিলভারের তৈরি সামগ্রীর দাপটে কমে গেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা। তবে আশার কথা হচ্ছে দই শিল্পকে ঘিরে এই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আবার নতুন করে জেগে উঠছে। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা অন্তত দুই শতাধিক পরিবার এই মৃৎশিল্পকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। 

বৌদ্ধ পাল জানান, প্লাস্টিক ও এ্যালোমুনিয়ামের জিনিসপত্র বাজারে আসায় মাটির তৈরী আসবাবপত্র তেমন একটা চলে না। তবে এখানে প্রতিদিন শত শত মন দই তৈরী হয়। এসব দই রাখার জন্য প্রয়োজন হয় মাটির পাত্রের। মাটির তৈরী সরা, পাতিল ও কাপে ভরে শতশত কেজি দই বাজারজাত করা হয়। তাই মাটির তৈরি এসব পাত্রের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বছরখানেক আগে বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্পের একটি কারখানা খুলেছেন। 

বৌদ্ধ পালের কারখানায় শুধু দইয়ের জন্য মাটির পাত্র তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, একটি দইয়ের পাতিল বানাতে ৩৮ টাকা, সরা বানাতে ২৫ টাকা ও কাপ বানাতে সাত টাকার মতো খরচ হয়। স্থানীয় বাজারে এসব দইয়ের পাতিল ৫০ টাকা, সরা ২৮-৩০ টাকা ও কাপ ৯ টাকায় বিক্রি করা হয় বলে তিনি জানান। 

সংসারের খরচ জোগাতে গৃহিণীরাও এ কাজ করে থাকেন। সুমনা রানী পাল বলেন, ছোটবেলা থেকেই এ কাজ করে আসছেন তিনি। প্রথমে বাবার ঘর ও পরে স্বামীর ঘরে এসে এ কাজ করছেন। অন্যদের মধ্যে এটাই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের পথ। মাটির তৈজসপত্র তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে তিনি জানান। 

সুভাষ পাল, খুদিরাম পাল ও শিশির পাল জানান, মাটির ব্যাংক, টালি, ফুলের টপ, পটারীসহ মাটির তৈরী খেলনা সামগ্রী এখনও বেশ জনপ্রিয়। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পুরনো এই পেশার প্রতি পাল সম্প্রদায়ের লোকজনের আগ্রহ বাড়বে বলে তারা জানান। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সরোয়ার জাহান, এই শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৃৎ শিল্পীদের বিভিন্ন প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে।


বিডি প্রতিদিন/২৬ মার্চ, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর