পঞ্চগড়ের বারুনী মহাস্নান উৎসব ঘিরে আযোজিত মেলায় চলছে অবৈধ জুয়া আর অশ্লীল নৃত্য। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিন ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়া লাভের টাকা ভাগাভাগি নিয়েও আয়োজকদের মধ্যে চলছে টানা পোড়ন।
তিন দিনব্যাপি এই বারুণী মহাস্নান উৎসব শুরু হয় রবিবার সকাল থেকে। জেলার বোদা উপজেলার বোয়ালমারীর করতোয়া নদীতে হিন্দু ধর্মালম্বীদের এই উৎসব শুরু হয়। দিনের আলো ফুটতে না ফুটতেই হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী ও সাধু সন্ন্যাসীরা এসে জড়ো হয় করতোয়া নদীর তীরে। দল বেধে তারা করতোয়ার উত্তরমূখী স্রোতে স্নান করেন। নদীর পাড়েই বিশাল খোলা মাঠে চলছে মেলা। জেলা প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও চলছে জুয়া, যাত্রা এবং সার্কাস। স্থানীয় গঙ্গা মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায় জেলা প্রশাসন মেলা পরিচালনার জন্য স্থানীদের নিয়ে একটি কমিটি করার কথা বললেও আদৌ কোন কমিটি হয়নি।
ফলে মেলায় কোন শৃংখলা নেই । যে যার মতো করে স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে যাত্রা, সার্কাস, জুয়া চালাচ্ছে । মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি ফনিভূশন জানান, গত সোমবার মেলায় আয়োজকদের মধ্যে দর কষাকষি নিয়ে সার্কাস প্যান্ডেলে মারামারি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সার্কাসের নারী শিল্পীরা নদীর ওপারে এক ইউপি সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর বলেন, পুলিশের সঙ্গে দর কষাকষি মেলেনি বলে পুলিশ একটি সার্কাস বন্ধ করে দেয়। দর্শক ক্ষিপ্ত হয়ে মারামারি শুরু করে। পরবর্তিতে আবার ম্যানেজ করে আবার শুরু হয়। বর্তমানে মেলায় দুইটি সার্কাস চলছে।স্থানীয়রা জানান, প্রত্যেকটি সার্কাসেই চলছে অশ্লিল নৃত্য। এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে র্যাফেল ড্রর নাম করে কয়েকটি প্যান্ডেলে চলছে অবৈধ জুয়া। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কাছে বিশ টাকা মুল্যে বিক্রী করা হচ্ছে র্যাফেল ড্র’র টিকেট। এক ঘন্টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ড্র। পুরস্কার দেয়া হচ্ছে তিন লিটার ,দুই লিটারের সয়াবিন তেল। আগত পুণ্যার্থি শ্যামল চন্দ্র জানান, এক ঘন্টায় কম করে দুই থেকে তিনশ টিকেট বিক্রী হচ্ছে । তিনি জানান গত দুই দিনে কয়েক লক্ষ টাকার জুয়া খেলা হয়েছে। স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে কয়েকটি শর্ত দিয়ে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে । সার্কাস বা র্যাফেল ড্র’র কোন অনুমোদন নেই। বারুনী স্নান উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই মেলাটির ইজারাদার সালাউদ্দিন বাবু জানান, মেলায় গ্রুপিং চলছে । একটা পক্ষ আমাকে হেয় করার জন্য সার্কাস ও র্যাফেল ড্র চালাচ্ছে । আমি পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি মেলা বন্ধ করে দিতে।
এদিকে মেলা শুরুর দিন থেকেই আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অনুকূলে ছিলোনা বলে জানিয়েছেন পুণ্যার্থিরা। তারা জানান অনেক পুণ্যার্থি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। পকেট মার হয়েছে। এরকম আগে কখনো ঘটেনি। পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা মিলে আঠারো জন এই মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন । দায়িত্ব প্রাপ্ত এসআই এস এম হাফিজ হায়দারের কাছ থেকে মেলার জুয়া এবং সার্কাসের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, সার্কাস এবং জুয়ার প্যান্ডেলের ৫’শ হাত দুরে একটি হোটেলে বসে তিনি বলেন কোথায় জুয়া এবং সার্কাস চলছে দেখিয়ে দেন। আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। অথচ হোটেলে বসেই সে সময় জুয়ার প্যান্ডেলের মাইকিং শোনা যাচ্ছিল।
সনাতন ধর্মমতে চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রিদশী তিথির এই তিন দিনে নদীর উত্তরমুখী স্রোতে স্নান করলে পাপ মোচন হয়। দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করতে অনেকে পূজাঅর্চনা করে মাথার চুল বিসর্জন দেয়। স্নানমন্ত্র পাঠ করে হাতে বেল পাতা, ফুল, ধান, দূর্বাঘাস, কলা ইত্যাদি অর্পনের মাধ্যমে স্নান সম্পন্ন করেন তারা। পিতা-মাতার স্বর্গবাসে এই স্নান জরুরী মনে করেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ সনাতন ধর্মালম্বী অংশ নেয় এই স্নান উৎসবে। প্রতি বছরের মত এবারও স্থানীয় গঙ্গা মন্দির কমিটি ও প্রশাসন বারুণী স্নান উৎসব আয়োজন করে। মঙ্গলবার সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে তিন দিনের পুণ্যস্নান উৎসব শেষ হলেও মেলা শেষ হচ্ছেনা। আয়োজকরা আরও কয়েকদিন মেলা চালানোর তদবির চালাচ্ছেন।
বিডি প্রতিদিন/২৮ মার্চ ২০১৭/হিমেল