৩০ মার্চ, ২০১৭ ১৮:১২

জলদস্যু 'ছোট রাজু বাহিনী'র প্রধানসহ ১৫ সদস্যের আত্মসমর্পণ

রাহাত খান, বরিশাল:

 জলদস্যু 'ছোট রাজু বাহিনী'র প্রধানসহ ১৫ সদস্যের আত্মসমর্পণ

স্বরাস্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে দেশী-বিদেশী ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ২৩৭ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু ‘ছোট রাজু বাহিনী’ প্রধান রাজু মোল্লা ওরফে ছোট রাজুসহ তার বাহিনীর ১৫জন সদস্য। আজ দুপুরে নগরীর রূপাতলীতে র‌্যাব-৮ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণ করেন তারা। র‌্যাব-৮ অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আনোয়ার উজ জামানের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাস্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ও র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। 

অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কমান্ডার এম. মোসায়েদ হোসেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এসএম রুহুল আমীন, রেঞ্জ ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসানসহ জলদস্যুদের হাতে নির্যাতিত জেলে, ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

অনুষ্ঠানে ছোট রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু মোল্লা বলেন, অভাবের তাড়নায় তিনি অঁন্ধকার পথে গিয়েছিলেন। সরকার এখন সুযোগ দিয়েছে। তাই তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালভাবে বাঁচার জন্য সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি তার এবং তার বাহিনীর সকল সদস্যের প্রাণ ভিক্ষা চান স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর কাছে। রাজু মোল্লা এখনও সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত অন্যান্য বাহিনীকে সরকারের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানান। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাস্ট্র মন্ত্রী বলেন, যেকোন মূল্যে বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বনদস্যু-জলদস্যু মুক্ত করা হবে। এখনও যারা সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত আছে, তাদেরও তিনি আত্মসমর্পনের আহ্বান জানান। নইলে তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি। 

মন্ত্রী আরো বলেন, যারা ইতিপূর্বে আত্মসমর্পন করেছে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার সহযোগীতা করছে। যারা সুপথে ফিরে আসবে তাদের সকলকে পুনর্বাসন করবে সরকার। দস্যুদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন মন্ত্রী। 

ছোট রাজু বাহিনী প্রধান রাজু মোল্লা ওরফে ছোট রাজু ছাড়াও আত্মসমর্পণ করা অপর ১৪ সদস্য হলেন মনিরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম গাজী, আলফাজ হোসেন, হারুন সরদার, বিল্লাল গাজী ওরফে ম্যাজিক বিল্লাল, মো. খতিব গাজী ওরফে খতিব, মিকাইল গাজী, কামরুল সরদার, ফরহাদ সরদার, সালাম গাজী, মিলন শেখ, ফরহাদ গাজী, সাব্বির শেখ ও মনিরুল গাজী মনি। এরা সকলেই খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। 

এ নিয়ে গত বছরের ৩১ মে মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত ৮ ধাপে ১০ দস্যু গ্রুপের ১০৭ জন সদস্য ২১৬ টি অস্ত্র এবং ১১ হাজার ৩৮০ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৮ উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবির। অনুষ্ঠানে গত ২৯ জানয়ারী আত্মসমর্পণ করা ‘জাহাঙ্গীর বাহিনীর’ ২০ সদস্য ও তাদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী। 

অনুষ্ঠান শেষে স্বরাস্ট্র মন্ত্রী সিলেট, মৌলভীবাজার ও কুমিল্লায় জঙ্গি বিরোধী অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সিলেটের বিষয়ে ইতিপূর্বে সব কিছু অবহিত করা হয়েছে। মৌলভীবাজারে কোন শীর্ষ জঙ্গি আছে কিনা তা এখন বলা যাচ্ছে না। অভিযান শেষ হওয়ার পরই বলা যাবে মৌলভীবাজারে শীর্ষ কোন জঙ্গি আছে কিনা কিংবা কে কে আছে। ভোট শেষ হলেই কুমিল্লায় ঘিরে রাখা বাড়িতে অভিযান শুরুর কথা বলেন তিনি। জঙ্গি বিরোধী অভিযানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতার প্রশংসা করে স্বরাস্ট্র মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা বাহিনী সঠিক কাজ করছে বলেই জঙ্গিরা আক্রমন করার আগেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সনাক্ত করছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মন্ত্রী বেলা ১২টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে বরিশাল আসেন। অনুষ্ঠান শেষে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। 

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর