৩০ মার্চ, ২০১৭ ১৮:৫৭

বাগেরহাটে ট্রলারডুবি, আরো ৯ লাশ উদ্ধার

বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি :

বাগেরহাটে ট্রলারডুবি, আরো ৯ লাশ উদ্ধার

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পানগুছি নদীতে ইঞ্জিনচালিত খেয়া ট্রলারডুবি ঘটনায় বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনে মা ছেলেসহ আরো ৯টি লাশ উদ্ধার হয়েছে।

সকাল থেকে ভেঁসে উঠছে একের পর এক লাশ। পানগুছি নদীতে এখন চলছে লাশের মিছিল। বৃহস্পতিবার দিনভর নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের ১৪টি টিম ট্রলার নিয়ে পানগুছি ও বলেশ্বর নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব লাশ উদ্ধার করেছে। এ নিয়ে গত ৩দিনে উদ্ধার হলো ৭ নারী ও ২ শিশুসহ ১৪জনের লাশ। নিখোঁজের তালিকায় থাকা মা ছেলের সন্ধান মিলেছে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর এখন নিখোঁজ রয়েছে ৬জন। বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি মাসুদ সরদার ঘটনাস্থলে থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনায় বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোমিনুর রশিদকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের তদন্ত রির্পোট দাখিল করেছেন। ওই তদন্ত রিপোর্টে ট্রলারটিতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন, খেয়াঘাট মালিকের স্বেচ্ছাচারিতা ও পানগুছি নদী দিয়ে বিভিন্ন জাহাজ ও নৌবাহিনীর গানবোট দ্রুত গতিতে চলার কারণে সৃষ্ট ঢেউয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া ৯টি লাশের পরিচয় মিলেছে। এরা হলো, মোরেলগঞ্জের কাছিঘাটা গ্রামের শিশু নাজমুল (৬), ভাষান্দল গ্রামের সালমা বেগম (৪০), তার শিশু সন্তান সাজ্জাত (২), কাছিকাটা গ্রামের শেখ আব্দুল মজিদ (৬৫), পোলেরহাট গ্রামের আনছার আলী হাওলাদার (৫৫), কালিকাবাড়ী গ্রামের রফিক শেখ (৩০), হাসেমখার হাট এলাকার সুলতান হাওলাদার (৬০), গোপালপুর গ্রামের মুন্নি বেগম (৩৪) ও শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দ পাইলট হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র আবির আল সামস (১৬)।

অপরদিকে নিখোঁজের তালিকায় থাকা মা ছেলে খদিজা বেগম (৪০) ও জুবায়ের হোসেনের (১৪) খুলনার একটি হাসপাতালে সন্ধ্যান মিলেছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৬জন।

মঙ্গলবার সকালে মোরেলগঞ্জের ছোলমবাড়ীয়া ঘাট থেকে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে উপজেলা সদরের পুরাতন থানা ঘাটে যাবার পথে পানগুছি নদীতে ইঞ্জিনচালিত ওই খেয়া ট্রলারটি ডুবে যায়।

নিহতদের বাড়িতে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি:
মোরেলগঞ্জের ইঞ্জন চালিত খেয়া ট্রলার ডুবিতে নিহতদের স্বজনদের সান্তনা জানাতে বাড়িবাড়ি ছুটছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ.এম বদিউজ্জামান সোহাগ। ২য় দিন বৃহস্পতিবার তিনি নিহত রফিক শেখ, আবির আল সামস, আনছার আলী, আব্দুল মজিদ, সালমা বেগম এর নামাজে জানাযায় শরীক হন এবং স্বজনদেরকে সান্তনা দেন। এ সময় জেলা, উপজেলার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন।

ইজারাদার ও ট্রলার চালকের নামে ৩ দিনেও মামলা হয়নি:
পানগুছি নদীতে ট্রলার দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত নিহত ১৪জনের লাশ উদ্ধার ও ৬জন নিখোঁজ থাকলেও টনক নড়েনি স্থানীয় প্রশাসনের। বৃহস্পতিবার দিনভর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সেই পুরানো দৃশ্য। অতিরিক্ত যাত্রী বোঁঝাই করে চলছে ইঞ্জিন চালিত খেয়া ট্রলারগুলো। নিয়মানুযায়ী ইজারাদারের ২টি নিজস্ব ট্রলার থাকার কথা থাকলেও এখানে কখনোই তা পালন করা হয়নি। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটার ৩দিন অতিবাহিত হলেও খেয়াঘাটের ইজারাদার ও ওই ট্রলারটির চালক আসলাম খানের নামে কোন মামলা হয়নি। দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অব্যবস্থা চলে আসলেও প্রশাসন ছিলো নির্বিকার।

মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. ওবায়দুর রহমান বলেছেন, ঘাটের ইজারাদার ছোলমবাড়িয়া মাঝিমাল্লা সমিতি ও দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারটির চালকের নামে মামলা নিয়ে তাদেরকে আটক করতে বলা হলেও এখনো তা কেন করা হয়নি তা আমার জানা নেই। এদিকে মোরেলগঞ্জে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশেদুল আলম বলেন, এই ঘটনায় মামলা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে কিছুই বলেননি। এখন আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।

এখন থেকে প্রতি ট্রলারে ২৫ জন:
পানগুছি ট্রাজেডিতে ২০জনের প্রাণহানীর পর বৃহস্পতিবার মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভায় এখন থেকে প্রতি খেয়া ট্রলারে ২৫জন করে যাত্রী বহন, দুই তীরে দুটি যাত্রী ছাউনি ও ইজারাদারের নিজস্ব দুটি খেয়া ট্রলার রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একই সাথে সরকারের কাছে অবিলম্বে পানগুছি নদীর ওপর ব্রীজ নির্মানে দ্রুত প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আ্যাড. শাহ্-ই-আলম বাচ্চু এ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তায়ন ও মনিটরিং করার জন্য ইউএনও ও থানার ওসিকে বলা হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর